প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং।। ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (হেমন্ত কাল)।। ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : একাত্তরে পরিকল্পিতভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। পাকিস্তান ও তাদের দালালরা মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাতের জন্য বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের দায়ী করতো। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের আওয়ামীলীগ ও ভারতের দালাল হিসেবে দেখতো। ওরা মনে করতো বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি প্রভাবিত অবিশুদ্ধ মানুষ। তাই একাত্তরের শুরু হতেই বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছিল পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ও তাদের দালালরা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদ সেই বিভীষিকাময় রাতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়লে একাত্তরের এপ্রিলের দিকে পরিবারকে গ্রামের বাড়ি মাওয়ায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজে ঢাকাতেই ছিলেন। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। পরে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদকে ঘাতকেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর। সেদিন সকাল থেকে বাসায় টানা একটা পর্যন্ত টাইপ করেছেন (টাইপরাইটারে সংবাদ লিখতেন)। লেখা শেষ করে স্ত্রীকে দুপুরের খাবার দিতে বলেন। তিনি যখন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসেছেন, তখন ঘাতকেরা তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। রোকনপুরের বাসা থেকে পাকিস্তানি ও আলবদর বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদ ১৯২৯ সালে বিক্রমপুরের লৌহজং থানার মাওয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
নিজামুদ্দীন আহমদ ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় সিভিল অ্যান্ড মিলিটারি গেজেট পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক আজাদ, ঢাকা টাইমস, পাকিস্তান অবজারভার ছাড়াও বার্তা সংস্থা এপিপি, ইউপিআই, পিপিআই, রয়টার, এএফপি ও বিবিসিতে কাজ করেন তিনি।
নিজামুদ্দীন আহমদ ১৯৬৯ সালে জানুয়ারী মার্চে আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি গোপনে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ বহির্বিশ্বে প্রদান করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক নিজামুদ্দীন আহমদের স্ত্রী কোহিনুর আহমদ সেদিনের ঘটনার মর্মস্পর্শী দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছেন স্মৃতি:১৯৭১-এ। (রশীদ হায়দার সম্পাদিত, পুনর্বিন্যাসকৃত প্রথম খণ্ড, বাংলা একাডেমি)। তিনি লিখেছেন, ‘দেখেই আমার বুকের ভেতরটা হিম হয়ে গেল। তারা যেন সাপের মতো হিসহিস করছে।…পালিয়ে যাওয়ার তো কোনো পথ নেই! ওরা সদর দরজায়। আমি ভাবছি কোন দিক দিয়ে গেলে নিজাম সাহেবকে আড়াল করা যায়, আর তিনি ভাবছেন ঘরের মেয়েদের যেন কিছু করতে না পারে। তাই ওরা যখন ডাক দিল, তখন আমি বাধা দেওয়ার আগেই তিনি বেরিয়ে এলেন।…ওরা আইডেনটিটি কার্ড দেখতে চায়। উনি দেখান।…তিনি নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে বুকে বন্দুক ধরে বলল হ্যান্ডস আপ। ইংরেজিতে তিনি বললেন, আমাকে হাত ধুয়ে আসতে দাও। কিন্তু দিল না। ততক্ষণে আমার ছেলেমেয়েদের কান্নার রোল শুরু হয়ে গেছে। আমার বড় মেয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছে। ওর বুকে বন্দুক ধরে বলল—“আল্লাহ মাৎ বালো”।’ এরপর ঘাতকেরা সামনে-পেছনে বন্দুক ধরে নিজামুদ্দীন আহমদকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিবিসি’র সাংবাদিক মার্কটালী সহ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা অনেক খুঁজেছেন তাঁর লাশ কিন্তু কোথায় পাওয়া যায়নি, বিজয়ী বাংলাদেশে অনেকদিন সংবাদপত্রে তাঁকে নিয়ে লেখালেখি হয়েছিল। কিন্তু না, বাঙালি জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নিজামুদ্দীন আহমদের বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম, মায়ের নাম ফাতেমা বেগম, স্ত্রী কোহিনুর আহমদ রেবা (১৯৯৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন), বড় মেয়ে শামানা নিজাম সিলভিয়া (৭১’এ বয়স ছিল ১১ বছর, বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী), ছোট মেয়ে শারমিন রীমা (৭১’এ বয়স ছিল ০৯ বছর, বর্তমানে মৃত), কনিষ্ঠ সন্তান পুত্র শাফকাত নিজাম (ঢাকায় বসবাস করছেন)।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন এছাড়া বিক্রমপুর খবর-এ প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন – bikrampurkhobor@gmail.com এই ঠিকানায়।