বিক্রমপুরের আলোকিত মানুষ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ
প্রকাশিত : রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ইংরেজি, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বাংলা (গ্রীষ্ম কাল), ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরি ।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী জুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা কথা-সাহিত্যে যে কয়েকজন লেখকের হাতে সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ১৯০৮ সালের ১৯ মে আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁহার পৈত্রিক বাড়ি বিক্রমপুরে লৌহজং উপজেলার গাঁওদিয়া গ্রামে। তিনি ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বিহারের সাঁওতাল পরগনা,বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
মাত্র ৪৮ বছরের জীবনে তিনি রচনা করেন ৪২টি উপন্যাস ও দু’শতাধিক ছোট গল্প। তার রচিত পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি ইত্যাদি উপন্যাস ও অতসী মামি, প্রাগৈতিহাসিক, ছোটবকুলপুরের যাত্রী ইত্যাদি গল্প সংকলন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। বাংলা ছাড়াও তার রচনাসমূহ বহু বিদেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
পিতার বদলির চাকরির সূত্রে মানিকের শৈশব, কৈশোর ও প্রথম যৌবনের ছাত্র জীবন অতিবাহিত হয় বাংলা-বিহার-ওড়িশার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদি নিবাস ছিলো পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমি তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য়। পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের কারণে ওই সব মানুষের জীবনচিত্র সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা ছিলো মানিকের। তাই ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনচিত্রকে তার সাহিত্যে অপূর্ব দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। পদ্মার তীরবর্তী জেলেপাড়ার পটভূমিতে রচনা করেন ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কল্লোল পত্রিকায় লেখা শুরু করেন। সে সময় যে তিনজন “বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রয়ী” খ্যাতি পেয়েছিল-তারা হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ । তিনি পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসাবে ও কাজ শুরু করেন । তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন যা কিছুদিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় । ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকটা মাস সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে কমলা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। এই সময় থেকে তার লেখায় কমিউনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রগতি লেখক সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন । ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় দাঙ্গা বিরোধ আন্দোলনের তিনি নিজে ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রগতি সংঘে লেখক ও শিল্পী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
সাহিত্যজীবন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষ। তিনি ফ্রয়েডীয় ও মার্কসবাদ মতবাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল তার অধিকাংশ লেখার মধ্যে এর প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়।
তার লেখা প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’, প্রথম উপন্যাস ‘দিবারাত্রি কাব্য’। তার লেখার মধ্যে মধ্যবিত্ত দরিদ্র মানুষের চিত্র ফুটে ওঠে। সে কালের সমকালীন সময়ের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে, সে সময়ে রাজনীতি,অর্থনৈতিক অবস্থা, সামাজিক চিত্র সাহিত্য অঙ্কন করেছেন। তার লেখা উপন্যাসের সংখ্যা ৪০টি এবং ৩০০ টি ছোটগল্প রচনা করেছেন। তার লেখা ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ বিখ্যাত দুটি উপন্যাস এছাড়াও তার লেখা কয়েককটি উপন্যাস হলো – ‘জননী’ (১৯৩৫), ‘দর্পণ’(১৯৪৫),‘সহরবাসের ইতিকথা’ (১৯৪৬),’চতুষ্কোণ’ (১৯৪৮), ‘স্বাধীনতা স্বাদ’(১৯৫১),সোনার চেয়ে দামি (১৯৫১), ‘ইতিকথার পরের কথা’(১৯৫২), ‘হলুদ নদী সবুজ বন’(১৯৫৬) ইত্যাদি। ‘সরীসৃপ’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘কুণ্ঠ রোগীর বউ’, ‘হলুদ পোড়া’,’শিল্পী হারানের নাতজামাই’, ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ প্রভৃতি বিখ্যাত ছোট গল্প তিনি রচনা করেছেন।
নাচের ইতিকথা’ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ বিখ্যাত দুটি উপন্যাস এছাড়াও তার লেখা কয়েককটি উপন্যাস হলো – ‘জননী’ (১৯৩৫), ‘দর্পণ’(১৯৪৫),‘সহরবাসের ইতিকথা’ (১৯৪৬),’চতুষ্কোণ’ (১৯৪৮), ‘স্বাধীনতা স্বাদ’(১৯৫১),সোনার চেয়ে দামি (১৯৫১), ‘ইতিকথার পরের কথা’(১৯৫২), ‘হলুদ নদী সবুজ বন’(১৯৫৬) ইত্যাদি। ‘সরীসৃপ’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘কুণ্ঠ রোগীর বউ’, ‘হলুদ পোড়া’,’শিল্পী হারানের নাতজামাই’, ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ প্রভৃতি বিখ্যাত ছোট গল্প তিনি রচনা করেছেন।
উপন্যাস হরফ (১৯৫৪) শুভাশুভ (১৯৫৪)
দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫) ধরাবাঁধা জীবন (১৯৪১) পেশা (১৯৫১)
জননী (১৯৩৫) চতুষ্কোণ (১৯৪২) স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১)
তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য সম্পদ মাত্র ৪৮ বছর বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর সব সাহিত্য মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে পরলোক গমন করেন বাংলা সাহিত্যের এই কাল পুরুষ।