প্রকাশিত:শুক্রবার,১মার্চ ২০১৯।
বিক্রমপুর খবর: অনলাইন ডেস্ক: পলান সরকারএকুশে পদকপ্রাপ্ত বইপ্রেমী পলান সরকার আর নেই। শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে রাজশাহীর নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পলান সরকারের ছেলে ও খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী। ছয় ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
পলান সরকারের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাউসা পূর্বপাড়া গ্রামে। ছেলে হায়দার আলী জানান,তার বাবা বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। আজ দুপুরে তিনি মারা গেছেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ।
আগামিকাল শনিবার (২ মার্চ) সকাল ১০টায় বাঘার হারুন অর রশীদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।এরপর পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। এ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১১ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’নামে একটি নাটকও তৈরি হয়েছে।
সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’ পান। পলান সরকার রাজশাহী জেলার ২০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। নিজের টাকায় বই কিনে তিনি পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাঁধে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেকদিন একেক গ্রামে যেতেন। বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন। এভাবে পায়ে হেঁটে একটানা ৩০ বছরের বেশি বই বিলি করেছেন পলান সরকার। এলাকাবাসীর কাছে তিনি পরিচিত ‘বইওয়ালা দুলাভাই’হিসেবে।
১৯২১ সালে জন্ম নেওয়া এই বই পাগল গুণী ব্যক্তি প্রথমদিকে স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিলি শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকায় এক থেকে ১০ ক্রমিক প্রাপ্তদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। পরে সবাইকেই বই দেওয়া শুরু করেন। পলান সরকার ১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার উপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।