পবিত্র হজ পালনের পূর্বপ্রস্তুতি ও করণীয়

0
0
হজ-পরবর্তী জীবনে করণীয়

প্রকাশিত: শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩।।  ১০ আষাঢ় ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)।। ৫ জিলহজ, ১৪৪৪ হিজরি।। বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : মুসলমানদের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে হজ একটি অন্যতম ইবাদত। প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করে থাকেন। ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে তার প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে কোরবানি দেয়ার জন্য জুমারার কাছাকাছি মিনায় নিয়ে যাওয়ার পথে শয়তানের কুমন্ত্রণায় আল্লাহর নির্দেশে অলৌকিকভাবে প্রিয় সন্তানের পরিবর্তে পশু কোরবানি হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আরবি জিলহজ মাসে ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে পবিত্র কাবা এবং কয়েকটি বিশেষ স্থান আল্লাহ ও রাসূল (সা.) নির্দেশ অনুযায়ী জিয়ারত, তাওয়াফ, অবস্থান করা এবং নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানাদি পালন করাই হলো হজ। হজে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে অবশ্যই বিভিন্ন কার্যক্রমের দোয়া ও তালবিয়া মুখস্থ রাখতে হবে। হজে যাওয়ার ৫-৭ দিন আগে দেনা-পাওনার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পাওনাদের দেনা পরিশোধ অথবা তাদের সম্মতি নিতে হবে এবং বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখাশোনা কুশল বিনিময় করতে হবে। তাছাড়া নিজের পরিবারের সঙ্গে (স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, বাবা-মা) বিশেষ প্রয়োজনীয় আলাপ এবং কার্যাদী সম্পূর্ণ করতে হবে। হজে যাওয়ার ২-১ দিন আগে নিজের একান্ত কিছু কাজ চুল-নখ অপ্রয়োজনীয় লোম পরিষ্কার করতে হবে। বাংলাদেশের হাজীদের ব্যাগের সাইজ ও রং একই রকম হওয়ায় ব্যাগ শনাক্ত করা খুবই কঠিন। এ কারণে বিশেষ চিহ্ন বা বিশেষ রঙের ফিতা হ্যান্ডেলে বেঁধে দিলে চিনতে সুবিধা হবে। হজ চলাকালীন অর্থাৎ জিলহজ মাসের ৮-১৩ তারিখ পর্যন্ত সমষ্টিগত বিশেষ কার্যাদি সম্পন্ন সময়, দলনেতার হাতে উঁচু লাঠির মাথায় দেশের পতাকার সঙ্গে যে কোনো রঙের কাপড় বেঁধে দিলে গ্রুপ বা দল চিনতে সুবিধা হবে।

ইতোমধ্যে আমাদের দেশ থেকে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। হজে যাওয়ার সময় কমপক্ষে আড়াই সেট এহরামের কাপড় পরার কাপড় তিনটা, গায়ে দেয়ার জন্য দুইটা হলেই চলবে। এছাড়া ভালো জামা কাপড়, জুতা, স্যান্ডেল, ব্রাশ, টুপি, হাতব্যাগ, বেল্ট সঙ্গে নিতে হবে। সুই-সুতা, সেপটিপিন, রেজার, কাঁচি, ব্লেড, ঘড়ি, কলম, কাগজ, নোটবুক, মোবাইল চার্জার নেইলকাটার সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার। যেমন : চিড়া, দো ভাজা করে ছোট ছোট খালি প্লাস্টিক বোতলে ভরে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় জিনিস লাগেজ এবং হ্যান্ডব্যাগে রাখবেন। মনে রাখবেন বোঝা যত ছোট রাখা যায় ততই ভালো । যাওয়ার আগে সঙ্গী নির্বাচন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা কোনো অসুবিধা হলে সাধারণত সঙ্গের লোকেরাই অধিক সহযোগিতা করে থাকেন। যাকে দলের আমির নির্বাচন করা হবে তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করাও প্রয়োজন। যেমনÑপাসপোর্ট বা হজপাসের ফটোকপি এবং প্রয়োজনীয় দেশি বিদেশি টেলিফোন নম্বর দুটি পৃথক স্থানে রাখা উচিত। যারা চশমা ব্যবহার করেন তারা দুই জোড়া চশমা সঙ্গে রাখবেন। জরুরি ওষধ যেমন, হার্টব্যাধি, ডায়াবেটিস, প্রেসার ইত্যাদিও ওষধ দুটি ভিন্ন জায়গায় রাখা দরকার, আর অবশ্যই হাতের কাছে রাখবেন, যাতে সহজেই পাওয়া যায়। যারা পবিত্র হজব্রত পালন করতে যাচ্ছেন, তারা অবশ্যই পানি বেশি পান করবেন। তবে মনে রাখবেন, খাবার বেশি খাবেন না, যতটুকু খেলে চলে ততটুকুই খাবেন। কেননা হজের দিনগুলোতে আপনি যদি অধিক আহার করেন, তাহলে আপনার ইবাদতে কষ্ট হবে। রোদের জন্য ছাতা ব্যবহার করবেন। তাই ছোট একটি ছাতা সঙ্গে নিয়ে গেলে ভালো হয়। যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে ভয় না পেয়ে হাজিদের জন্য যে চিকিৎসা ক্যাম্প রয়েছে, সেখানে যাবেন। তারা আপনার ভালো চিকিৎসা করবেন।

যেসব মহিলা হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন, তারা একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, নিজেই ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কোথাও একা যাবেন না। এতে হয়তো আপনি রাস্তা ভুলে যেতে পারেন আর নিজ ক্যাম্পে ফেরত আসাটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে তাই কোথাও যেতে হলে যার সঙ্গে হজে যাচ্ছেন, তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং আপনার ক্যাম্পকে চিনে রাখার জন্য কোনো না কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে, আন্ডারওইয়্যারের ভেতরের দিক সুবিধামতো পকেট তৈরি করে চেইন লাগিয়ে টাকাপয়সা সাবধানে রাখতে হবে। পরিচিতি এবং পরিচয়পত্র গলায় ঝুলানো ব্যাগে সাবধানে রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন মক্কা মদিনার চত্বরে ওয়াশরুমগুলোতে পানি ব্যবহারের জন্য ঘটি বদনা নেই, হ্যান্ড শাওয়ার ব্যবহার করতে হবে। এ কারণে সাথে খালি প্লাস্টিক বোতল রাখা জরুরি। কারণ প্রসাবের পর পানি ব্যবহার করতে গেলে হ্যান্ডশাওয়ার চাপ দিলে ফ্লোর থেকে ছিটকে নাপাক পানি গায়ে লাগবে। এজন্য খালি বোতলে পানি ভরে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পবিত্র হজ পালনের জন্য ৪০-৫০ বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ করা উচিত। পবিত্র হজপালনে শক্তি-সামর্থ্য থাকা দরকার। কারণ পবিত্র হজ শুরুর তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১০ জিলহজ তারিখে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। মুযদালিফা থেকে হেঁটে জামারায় বড় শয়তানের পাথর ছুড়ে কাবায় এসে তাওয়াফ ও ছায়ী শেষ করে কোরবানি করতে হবে। আবার মিনায় ফিরে তাঁবুতে রাত যাপন করতে হবে। এ কারণে একই দিনে পরিশ্রম হয় অনেক বেশি। শক্তি-সামর্থ্য না থাকলে হজের এই কঠিন কার্যক্রম সুন্দরভাবে শেষ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আপনাদের জন্য আমাদের দোয়া থাকবে, আপনারা আল্লাহর মেহমান হিসেবে সুন্দরভাবে পবিত্র হজব্রত পালন করে সুষ্ঠুভাবে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।

(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..

‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।

আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

নিউজ ট্যাগ:

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন