প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার,৩০ জুলাই ২০২০ইং ।। ১৫ই শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : আজ পবিত্র হজ।
সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরিহিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে-
‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাকা। (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আপনার কোনো শরীক নেই, সকল প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু আপনারই, সব সাম্রাজ্যও আপনার, আপনার কোনো শরীক নেই)।
মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সবাই সমবেত হয়েছেন। আজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন তারা। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই মূলত হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।
আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত না থাকলে হজ হবে না। মসজিদে নামীরাকে কেন্দ্র ধরে ১০ কিলোমিটার বৃত্তাকারভাবে আরাফাতের ময়দান।
এবার বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমানের হজ পালনের চিরায়ত দৃশ্য দেখা যাবে না। মহামারী করোনার কারণে সীমিত করা হয়েছে এবারের হজের অংশগ্রহণ। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার ফজরের নামাজ শেষে কাবা শরিফ তাওয়াফ করে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনার উদ্দেশে রওনা হন আল্লাহর মেহমানরা। পবিত্র মক্কা হতে মিনা পর্যন্ত যেখানে প্রতি বছর ২৫ লক্ষাধিক মুসলিমের পদচারণা থাকত, এবার যাচ্ছেন মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার মুসল্লি। তবুও আকাশ-বাতাস মন্দ্রিত করে ধ্বনিত হচ্ছে- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…।’
পবিত্র মিনার খিমায় (তাঁবু) তাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাটাতে হবে। বুধবার তারা মিনায় সারা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছেন। আজ ফজরের নামাজ শেষে তারা মিনা থেকে যাবেন আরাফাতের ময়দানে। সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকবেন তারা। সেখানে অবস্থিত মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা পাঠ করা হবে।
এবার খুতবা দেবেন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত খতিব শায়খ আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া।
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরাফাতের ময়দানে হাজীদের অবস্থানের দৃশ্য টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। খুতবা বাংলাসহ ১০টি ভাষায় অনূদিত হবে।
খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। তারা সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। রাতে সেখানে অবস্থান করবেন খোলা মাঠে।
আগামীকাল ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে হাজিরা জামারাহতে যাবেন।
হাজিরা শয়তানকে উদ্দেশ্য করে পাথর নিক্ষেপ করবেন, কোরবানি দেবেন, মাথা মুণ্ডন করবেন, মক্কায় গিয়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ (সৌদি আরবের তারিখ অনুযায়ী) পর্যন্ত অবস্থান করবেন।
ইসলামের বিধান মতে, ১০ জিলহজ মিনায় প্রত্যাবর্তনের পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়।
শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ,
আল্লাহর উদ্দেশে পশু কোরবানি,
মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটা এবং
তাওয়াফে জিয়ারত। এরপর ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। সবশেষে কাবা শরীফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের কার্যক্রম।
চলতি বছর কতজন পবিত্র হজ পালন করছেন জানতে চাইলে সৌদি আরবে বাংলাদেশের কাউন্সিলর (হজ) অতিরিক্ত সচিব মাকসুদুর রহমান বুধবার বলেন, মোট কতজন এবার হজ পালন করছেন এ বিষয়ে সৌদি হজ মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট করে বলেনি। তবে তা সর্বোচ্চ ১০ হাজার হতে পারে এমন ধারণাই আমাদের দেয়া হয়েছিল। লাইভ টিভিতে হজের আনুষ্ঠানিকতা দেখে মনে হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার লোক হতে পারে।
সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমর আল মাদ্দাহ জানান, হাজীদের জন্য থার্মাল স্ক্যানার বসানো ও ইলেকট্রনিক পরিচয় পত্রের মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন,এ মুহূর্তে পুরো হজ প্রক্রিয়া শেষ করতে প্রযুক্তিই আমাদের কালো ঘোড়া। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো ঘটনা এবং এতে মৃত্যু ছাড়াই যাতে হজ শেষ হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।
আরব নিউজ ও আলজাজিরা জানায়, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ বার জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে কাবাঘর ও আশপাশের স্থানগুলো। ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মী এসব কাজে নিয়োজিত। হজের জন্য নির্দিষ্ট অন্য শহরগুলোর পরিছন্নতার জন্যও রয়েছেন ১৩ হাজার কর্মী। এদিকে জমজমের পানি বোতলে করে সরবরাহ করা হবে হাজীদের। তবে করোনার কারণে ছোঁয়া যাবে না কাবাঘর, কালো পাথরে চুমু খাওয়াও এবার নিষিদ্ধ।
নামাজ পড়ার জন্য আনতে হবে নিজস্ব জায়নামাজ। এবার বিশ্বের কোনো দেশ থেকেই কেউ হজে যাওয়ার সুযোগ পাননি। তবে সৌদিতে অবস্থানরত হাতেগোনা কিছুসংখ্যক বাংলাদেশি এ বিরল সুযোগ পেয়েছেন। এবার হজে অংশ নেয়া মুসল্লির ৭০ ভাগ প্রবাসী; বাকি ৩০ শতাংশ দেশটির নাগরিক। সব হাজীর খরচ দিচ্ছে সৌদি সরকার।
১৯ জুলাই থেকে এবারের হজে অংশগ্রহণকারী সবাইকে বাধ্যতামূলক ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হয়েছে। সবার বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। হজের প্রতিটি কাজে একজন থেকে অন্যজনের দূরত্ব থাকছে ১ দশমিক ৫ মিটার (পাঁচ ফুট।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..