সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিহত বেড়ে ৪০

0
1
সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিহত বেড়ে ৪০

প্রকাশিত: শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩ ইং।। ২২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)।। ২১ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি।।

বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০ জনে। নিহতদের মধ্যে ৬ ভারতীয় সেনা রয়েছেন। এখনো নিখোঁজ বহু মানুষ। তাদের সন্ধানে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। হিমালয়ের এই ছোট রাজ্যে আটকে পড়া পর্যটকদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে আনার কথা ভাবছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। রয়টার্স
সিকিমের লাচেন উপত্যকার লোনাক হ্রদের ওপরে গত মঙ্গলবার মাঝরাতের পরে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে গত কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টিপাতও ছিল। মেঘভাঙা বৃষ্টি বলতে বোঝায় সাধারণত অতি ভারি বৃষ্টি, যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় হয়। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, এক ঘণ্টায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১০ সেন্টিমিটার অথবা আধঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার বা এর বেশি বৃষ্টি হলে সেটাকেই মেঘভাঙা বৃষ্টি বা ‘ক্লাউড বার্স্ট’ বলা হয়। মূলত সেই বৃষ্টিপাতের পর পার্বত্য সিকিম রাজ্যের লোনাক হ্রদ বুধবার উপচে পড়ে এবং এর ফলে বিশাল বন্যা দেখা দেয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজ্যটির প্রায় ২২ হাজার মানুষের জীবন ক্ষতির মুখে পড়েছে। বন্যায় ১৪টি সেতু ভেঙে গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের পর সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় সিকিমে কমপক্ষে ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। উদ্ধারকারীরা এখনো নিখোঁজদের সন্ধান করছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিকিমের কর্মকর্তারা বন্যায় মৃতের সংখ্যা ১৮ বলে জানিয়েছিলেন। তবে পার্শ্ববর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যের জরুরি পরিষেবার দলগুলো বন্যার পানিতে ভেসে আসা আরো ২২টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এখনো ১৬ সেনা নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সিকিমের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়েছেন হাজারও পর্যটক। ভারতীয় সেনাবাহিনী বলেছে, এই অঞ্চলে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় তারা এখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আটকা পড়া প্রায় ১৫০০ পর্যটককে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
সিকিমের পূর্বে অবস্থিত পাকইয়ং গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হিমালয় পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই গ্রামে ৭ জন নিহত হন এবং ২৩ সেনাসহ মোট ৫৯ জন নিখোঁজ হয়েছে। সিকিমের মুখ্য সচিব ভিবি পাঠক জানান, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সিকিমের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত লোনাক লেকের পানি উপচে পড়ে এবং এটি তিস্তা নদীর দিকে প্রবাহিত হয়।
ঘোলা পানির ঘূর্ণিতে ভেসে আসে মরদেহ : তিস্তা নদী সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে পড়েছে। সিকিমে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির পরে সমতলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় তিস্তার দুধারে। বুধবার ঘুম ভেঙে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা দেখেন এক ভয়াবহ দৃশ্য। ঘোলা পানির ঘূর্ণিতে ভেসে আসছে মরদেহ, চটি, জামাকাপড়, বাসনপত্র, গবাদি পশু থেকে রান্নার গ্যাসের আধভর্তি সিলিন্ডার।
বুধবার সকালে বাংলাদেশ সীমান্তের উজানে গজলডোবা ব্যারাজের মূল ৪৫টি গেটই খুলে দেয়া হয়। ভোর থেকে হঠাৎ পানির তোড় এমন বেড়ে যায় যে, গেট না খুলে দিলে পুরো ব্যারাজটাই ভেসে যেত। এরই মধ্যে পানির তোড়ে ক্ষতি হয়েছে জলপাইগুড়ি লাগোয়া তিস্তা বাঁধ ও স্পারের।
মেঘভাঙা বৃষ্টির সতর্কবার্তা আগে থেকেই ছিল : মনে করা হচ্ছে, মঙ্গলবার লোনক হ্রদ ফেটে সিকিমে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার নেপথ্যে রয়েছে ‘গেøসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ (জিএলওএফ)। তবে সিকিমের বুকে যে দুর্যোগ নেমে আসতে পারে, তা নিয়ে অতীতে অনেকবার সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। গত এক দশক ধরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এবং গবেষকরা সিকিমে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ ফেটে মারাত্মক বন্যা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছেন। সাবধান করেছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও।
জিএলওএফ হয় তখনই, যখন হিমবাহ গলা পানি জমে সৃষ্ট হ্রদগুলো অতিরিক্ত পানি জমার কারণে বা ভূমিকম্পের মতো কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফেটে যায়। গবেষণায় আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল যে, সিকিমের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে দক্ষিণ লোনক হ্রদ ১৪টি বিপজ্জনক হ্রদের মধ্যে একটি, যেখানে জিএলওএফ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) সূত্রে খবর, লোনক হ্রদ লোনক হিমবাহ সৃষ্ট। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭ হাজার ১০০ ফুট উপরে লোনক হিমবাহটি রয়েছে। এটি ২৬০ ফুট গভীর, প্রায় ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং আধ কিলোমিটার প্রস্থ। সব মিলিয়ে ১ দশমিক ২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই হিমবাহ। লোনক হ্রদও ১৬৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই হ্রদের আয়তন এবং গভীরতা দ্রুত বাড়ছিল। হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ হলেও এতে পানি বেশি ছিল না। কিন্তু গত পাঁচ দশকে এই হ্রদের গভীরতা দ্রুত বেড়েছে। সেইসঙ্গে পানির স্তরও বেড়েছে। বর্তমানে এই হ্রদের গভীরতা ১০ তলা বাড়ির সমান। দৈর্ঘ্যে আড়াই কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৬০০ মিটার। হ্রদের এই দ্রুত পরিবর্তনে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, মেঘভাঙা বৃষ্টি হলে মহাবিপদ নেমে আসবে সিকিমে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার মিটার উচ্চতায় রয়েছে লোনক হ্রদ। এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, যেভাবে উষ্ণায়নের প্রভাব বাড়ছে, তাতে এই হ্রদে জমে থাকা বরফ দ্রুত গলতে শুরু করবে, সেইসঙ্গে পানির স্তর বাড়বে। এর সঙ্গে যদি মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়, তা হলে হ্রদ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। অনেক সময় বরফে বরফে ঘষা লেগেও গলন প্রক্রিয়া দ্রুত হতে থাকে। লোনক হ্রদের ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

 (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।       

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন