প্রকাশিত :রবিবার,২৮ জুন ২০২০ইং ।। ১৪ই আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : দেশের উত্তর জনপদ বন্যাকবলিত । কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও দিনাজপুরের নদ-নদীতে বন্যার পানি ঢুকছে। এরই মধ্যে নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠেছে। ফলে একের পর এক প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন জনপদ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত পানি বেড়ে ছয় জেলার আরও এলাকা প্লাবিত হবে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জেলা আক্রান্ত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা জানান, মাঝারি ধরনের এ বন্যা দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, যমুনার কিছু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে গেছে। এ কারণে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যাকবলিত হচ্ছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। আগামী কয়েকদিন পানি আরও বাড়বে। এতে এসব এলাকার নতুন নতুন জায়গা বন্যাকবলিত হবে। আগামী ৪-৫ তারিখ পর্যন্ত পানি বাড়বে।
যানা যায়– নীলফামারী : উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধগুলো ক্ষতির মুখে দাঁড়িয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। এদিকে তিস্তার চরাঞ্চলের ৩ হাজার পরিবার এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, তিস্তার বন্যায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশ চাঁপানি, ঝুনাগাছ চাঁপাান, জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারীসহ ১০ ইউনিয়নের তিস্তা অববাহিকার ১৫টি চর ও গ্রাম তিস্তার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের বাদাম খেত ও আমন ধানের বীজতলা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে রয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার অধিকাংশ নিচু এলাকায় বন্যা দেওয়া দিয়েছে। লালমনিরহাট : ভারি বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি ফের বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২৫ জুন রাত থেকে বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ। গতকাল সকাল ৬টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে রেকর্ড করা হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে পানি কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা ৩টায়ও পানি কমে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এদিকে ধরলার পানি লালমনিরহাটের কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্থানীয়রা জানান, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেক মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। অনেকের ফসলের খেত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, এ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ছয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রংপুর : বন্যায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বিনবিনা এলাকার পাকা সড়ক। ভাঙন দেখা দিয়েছে বাঁধেও। জানা গেছে, গঙ্গাচড়ার সাতটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার প্রায় ১৫টি চরে বসবাসকারী প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলো হচ্ছে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, চরইচলী, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, চর মটুকপুর, নোহালী ইউনিয়নের বাগডোহরা, চর নোহালী ও কচুয়া। এসব এলাকায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় কিছু পরিবার গবাদিপশুসহ স্থানীয় উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু বলেন, বিনবিনা এলাকায় ১০০ পরিবার পানিবন্দী। ভেঙে যাচ্ছে ওই এলাকার পাকা রাস্তা। বিনবিনা এলাকায় বাঁধেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুুল্লাহ আল হাদী জানান, তার ইউনিয়নের শংকরদহ, ইচলী, জয়রামওঝা ও বাগেরহাট এলাকায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তবে পানি এখনো বৃদ্ধির দিকে। এদিকে কাউনিয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের চর ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে বালাপাড়া, টেপামধুপুর, শহীদ বাগ ও নাজিরদহ। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ওইসব গ্রামের কমপক্ষে ২০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জেলার চরাঞ্চলগুলোর প্লাবিত হওয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ও খাটিয়ামারী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা ও যমুনাবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, থৈকরপাড়া, গোবিন্দি, বাঁশহাটা, কাপাসিয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম এবং তিস্তাবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চন্ডীপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, শ্রীপুর গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তবে পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যার তথ্য এখনো উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের কাছে নেই।
দিনাজপুর : কয়েকদিনের অবিরাম টানা বৃষ্টিতে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার প্রধান তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। বৃষ্টি অবিরাম থাকলে পানি বেড়ে আজ সকালের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তারা।
কয়েকদিনের অবিরাম টানা বর্ষণে দিনাজপুর সদরের মাঝাডাঙ্গাসহ আশপাশের গ্রাম, বাঙ্গীবেচা ঘাট এলাকা, সাধুর ঘাট এলাকা, দপ্তরীপাড়া, হঠাৎপাড়ার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার রাজারামপুর, সুজাপুর, খয়েরবাড়ী ও বেতদিঘি, বিরল উপজেলাসহ আরও কয়েকটি উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিছু জায়গায় ডুবে গেছে ফসলের খেত। আগাম তৈরি করা আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে অনেকের। কাহারোল উপজেলার ডাবুর ইউপির বলেয়া ও রসুলপুর ইউপির ভেলোয়া গুচ্ছ গ্রামগুলোর চারদিকে নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে। বৃহস্পতিবার বিকালে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন স্থানীয় (বীরগঞ্জ-কাহারোল) সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ সবকটি নদ-নদীর পানি হুহু করে বাড়ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে অস্বাভাবিক বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। পর্যায়ক্রমে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বেড়ে বিপৎসীমা দুপুরে অতিক্রম করতে শুরু করে। এ ছাড়া অন্যান্য নদ-নদী তিস্তা, দুধকুমর ও গঙ্গাধরের পানিও বেড়েছে। এ অবস্থায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরের মানুষ এখন বন্যায় কবলিত হতে যাচ্ছে। এদের বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে চরের ১০ হাজার মানুষ। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।