প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার,২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং ।। ১১ই আশ্বিন ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর :ডঃ নূহ-উল-আলম লেনিন এর ফেইজবুক থেকে :
জন্ম:১৯০৮- মৃত্যু:২৬ সেপ্টেম্বর,১৯৭৪
আবদুর রহমান মাস্টার ছিলেন ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী সংগঠক। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তার জন্ম রাণীগাঁও গ্রামে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। ১০ বছর বয়সে পিতা জবর আলী, দুই ভাই ও সৎ-মা একদিনের ব্যবধানে কলেরায় মারা যান। পিতৃ-মাতৃহীন রহমানের শৈশব কাটে বড় বোনের কাছে। বড় বোন মিছিল তখন সপরিবারে থাকতেন আসামের বিলাসীপাড়ায়। মিছিল এবং তার স্বামী সুজাত বেপারীর অভিভাবকত্বে রহমান ১২ বছর বয়সে আসামের বিলাসীপাড়ার ইন্দ্রনারায়ণ একাডেমি নামক মাধ্যমিক স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু করেন।
শিশু-কিশোর বয়স থেকেই তার মধ্যে জন্ম নিয়েছিল অদম্য শিক্ষানুরাগ ও জ্ঞানস্পৃহা।
মায়ের মৃত্যুর পর চার বছরের শিশু রহমানের পড়াশোনার জন্য নব ঠাকুর নামে একজন গৃহশিক্ষক নিয়োগ করা হয়। নরু ঠাকুরের কাছেই তার হাতেখড়ি। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিও রচিত হয় তার কাছে। এরপর পরিস্থিতি তাকে আসামে যেতে বাধ্য করে। সেখানে ইন্দ্রনারায়ণ একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দেওয়ায় ডাবল প্রমোশন পেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সুযোগ পান। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষাসমূহে অনুরূপ কৃতিত্ব দেখিয়ে মাইনর ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মেধা-মননে রহমানের এমন উৎকর্ষ লক্ষ করে স্কুলের শিক্ষক ও জাতীয় কংগ্রেস দলের এক নেতা শ্রী বিমল বসু রাজনৈতিক পাঠ দিতে শুরু করেন। ফলে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে কংগ্রেসের রাজনীতির শিক্ষানবিসী শুরু করেন।
সুজাত বেপারী বিলাসীপাড়া বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ছিলেন বলে থানার প্রধানকর্তা রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাÐে বেপারীর মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেন। বেপারী শ্যালক রহমানকে ডেকে রাজনীতি না করা ও বিমল বাবুর সংশ্রব ত্যাগ করার কথা বলে কিছুটা ভর্ৎসনা করেন। তার আত্মসম্মানে আঘাত লাগায় রহমান বিলাসীপাড়া থেকে পালিয়ে যান। বিলাসীপাড়া থেকে গৌহাটি স্টিমার ঘাটে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর রহমান স্টিমারে দেশে ফেরার মতলব করছিলেন। ঐ সময় ঘাটের এক নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাষানচরের খেয়া নৌকায় যাত্রী ডাকছিল। রহমান নৌকায় উঠে পড়েন এবং ভাষানচরের এক মক্তবে আশ্রয় নেন। মক্তবের অধ্যক্ষ ছিলেন তরুণ আবদুল হামিদ খান। রহমানের সব খবর জেনে মওলানা সাহেব রহমানকে মক্তবে তার সঙ্গী করে নেন। ভাষানচরের এই আবদুল হামিদ খানই পরবর্তীতে পরিচিতি লাভ করেন মওলানা ভাসানী রূপে। গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলন এবং মাওলানা শওকত আলী মোহাম্মদ আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের ‘খেলাফত’ আন্দোলনের কারণে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করার সংবাদ শোনার পর ভাসানী ও রহমান নৌকাযোগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে ময়মনসিংহ চলে আসেন। ময়মনসিংহে আসার পর মওলানা ভাসানীর পরামর্শে দীর্ঘদিন পর তরুণ রহমান নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
এরপর রহমান কর্মজীবন শুরু করেন। রাণীগাঁও গ্রামের দক্ষিণে ভাওয়ার গ্রাম ও বিখ্যাত হাট। এক স্বদেশী বাবু জিতেন ঘোষ ভাওয়ার হাটে আস্তানা গেড়েছেন। কর্মজীবনের শুরুতে জিতেন ঘোষের সাহচর্যে এসে স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হলে মাইনর পাসের সুবাদে ভাওয়ার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতা লাভ করেন। শিক্ষকতাকে পাকাপোক্ত করতে ভাগ্যকুলে জিটি (গুরু ট্রেনিং) পড়তে শুরু করেন। তিনি কৃতিত্বের সাথে জিটি পাস করেন। মাস্টারি পাকাপোক্ত হলে শিক্ষকদের প্রেরণায় ১৯৪০-৪১ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করেন। তখনকার দিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রবেশিকা বা মেট্রিকুলেশান পরীক্ষায়ও তিনি পাস করেন। রাজনীতি ও শিক্ষাদান করে রহমান যে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন, তার মূলে ছিলেন জিতেন ঘোষ এবং স্বদেশী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাই ১৯৪২ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। একজন মুসলমান হয়ে বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রথম দিকের একজন কমিউনিস্ট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। রহমান মাস্টার পার্টির নির্দেশে কৃষক সংগঠন ও তাঁতি সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
জাপানি আক্রমণের ভয়ে যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার বাংলা অঞ্চলে পোড়ামাটিনীতি গ্রহণ করে। ফলে বাংলায় তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়। মানব সৃষ্ট এই দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দুর্ভিক্ষের সময় মানুষ বাঁচাতে জিতেন ঘোষের নেতৃত্বে পশ্চিম বিক্রমপুর এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টি অনেকগুলো লঙ্গরখানা গড়ে তোলে। রাণীগাঁও গ্রামেও একটি লঙ্গরখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। রহমান মাস্টার আর তার স্ত্রী মোমেনা খাতুন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে বাঁচাতে নিজেদের সন্তানদের বিলাসীপাড়ায় পাঠিয়ে দেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পার্টির উদ্যোগে পরিচালিত লঙ্গরখানার পাশাপাশি দুর্ভিক্ষে পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের রক্ষার জন্য রাণীগাঁও গ্রামে একটি ‘শিশু সদন’ বা এতিমখানা চালু করেন। ১৯৪৬ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে শিশু সদনের বাচ্চাদের সরকারি এতিমখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রহমান মাস্টার ছিলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি ১৯৪২ সালে প্রকাশ্য হওয়ার পর বোম্বেতে অনুষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) প্রথম কংগ্রেসে বাংলার প্রতিনিধিদের একজন হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কমিউনিস্ট পার্টির ওপর চরম নির্যাতন নেমে আসে। ১৯৪৮ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিপিআই-র দ্বিতীয় কংগ্রেসে বি টি রণদীভের লাইন অনুসরণ করে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিও উগ্র হঠকারী লাইন গ্রহণ করে। পার্টি ‘ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়’ বলে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের পথ গ্রহণ করে। এই উগ্র হঠকারী লাইনের কারণে পূর্ব বাংলায় অসংখ্য কমিউনিস্ট নেতা ও কর্মী গ্রেফতার হন। রহমান মাস্টারও গ্রেফতার হয়ে কারা নির্যাতন ভোগ করেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দিদের অধিকারের দাবিতে অন্যদের সাথে তিনিও দীর্ঘদিন অনশন ধর্মঘট পালন করেন।
১৯৪৮ সালে লৌহজং-এর পাইকারা গ্রামে পুলিশের নারী নির্যাতন এবং গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পরিচালিত নারকীয় অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান। এই প্রতিবাদ আন্দোলনে এলাকায় বিপুল মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করে। পুলিশ সেই মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। ফলে রফিক, শফিক, জব্বার নামে কয়েকজন ছাত্র নিহত হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে দাবানলের মতো ভাষা আন্দোলন সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৫২-এর ২২ ফেব্রুয়ারি ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র হত্যার খবরে বাংলার সর্বত্র এবং বিশেষ করে ঢাকার সন্নিকটের জনপদের স্কুল-কলেজ ছাত্র-জনগণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ফরিদপুরের মুসলিম লীগ নেতা ও মন্ত্রী মোহন মিঞা ফরিদপুর পৌরসভার নির্বাচনে নিজের লোককে নির্বাচিত করতে উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ফোন করে তাকে ঢাকা চলে আসতে বলেন। ফরিদপুরের গোয়ালন্দ ঘাট থেকে স্টিমারে উঠে মন্ত্রী ২১ তারিখ রাতে ঢাকার পথে রওনা করেন। ২২ তারিখ ভোরে তার ভাগ্যকুলে আসার সংবাদ শুনে ভাগ্যকুল হাই স্কুলের ছাত্ররা কাজী নজরুল ও কাজী জলকদরের নেতৃত্বে স্টিমার ঘাটে মন্ত্রীকে নাজেহাল করার প্রয়াস পায়। এই সংবাদ লৌহজং-এর তারপাশা স্টিমার স্টেশনে পৌঁছলে লৌহজং বালিকা বিদ্যালয়ের হেডমাস্টার প্রখ্যাত ডাক্তার ও কংগ্রেস নেতা প্রশান্ত সেনের স্ত্রী ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রহমান মাস্টারকে জানান। রহমান মাস্টার কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে ডা. প্রশান্ত সেন এবং তার স্ত্রী বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীসহ তারপাশা স্টিমার ঘাট অবরোধ করে। বিক্ষোভের মুখে স্টিমার আর জেটিতে না ভিড়ে মাঝনদীতে জেলেদের নৌকায় কয়েকজন যাত্রী নামিয়ে চলে যায়। প্রশান্ত সেন ও রহমান মাস্টারের নেতৃত্বে ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ করে লৌহজং গার্লস স্কুলের সন্নিকটে গান্ধী ময়দানে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারি রাণীগাঁও গ্রাম থেকে শিক্ষক রহমান মাস্টার যথারীতি ব্রাহ্মণগাঁও স্কুলে যাত্রা করেন। স্কুলের কাছাকাছি আসতেই তার পেছনে পেছনে খড়িয়া কোরহাটি টেউটিয়ার স্কুলগামী ছাত্রদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মাঝিবাড়ির পাশ দিয়ে আসার সময় একদল পুলিশ রহমান মাস্টারের সাথে কথা বলার ছলনায় ছাত্রদের স্কুলে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। পাইকারা অধর মাদবরের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ গতকালের মিছিলের জন্য ওপরের নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করা হলো বলে জানায়। এরপর তারা লৌহজং বন্দর সংলগ্ন ডা. প্রশান্ত সেনকেও গ্রেফতার করে। একই দিন শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার হন সাংবাদিক সফিউদ্দিন।
এ যাত্রায় খুব বেশি দিন তাদের জেলে থাকতে হয়নি। আন্দোলনের চাপে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। সেই সময় কমিউনিস্ট পার্টি কার্যত নিষিদ্ধ থাকায় প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতার সুযোগ গ্রহণের জন্য কমিউনিস্টরা আওয়ামী লীগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যান্য কমিউনিস্ট নেতার সাথে রহমান মাস্টারও আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। মুন্সিগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) লৌহজং উপজেলায় আওয়ামী লীগ সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি লৌহজং থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম কর্মকর্তা ছিলেন।
১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত হয় পূর্ব বাংলার প্রথম সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। রহমান মাস্টার আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে এই অঞ্চলে নেতৃত্বের ভ‚মিকা পালন করেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করলেও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আদমজীতে বাঙালি-বিহারি দাঙ্গার অজুহাতে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করে। জারি করা হয় ৯২(ক) ধারা। এই ধারায় তখন মন্ত্রী শেখ মুজিবসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। জিতেন ঘোষ ও রহমান মাস্টারকেও একই দিন গ্রেফতার করা হয়। এ যাত্রায় বেশ কয়েক মাস তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেন। কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে রহমান মাস্টারের পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
১৯৫৭ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হয়। গোপন পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রহমান মাস্টার ন্যাপে যোগদান করেন। তিনি আমৃত্যু মহকুমা ন্যাপের সহ-সভাপতি ছিলেন।
বিক্রমপুর অঞ্চলের তাঁতিদের সংগঠিত করার জন্য দেশভাগের আগেই কমিউনিস্ট পার্টি উদ্যোগ গ্রহণ করে। রহমান মাস্টার তাঁতি সমাজকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে ‘বিক্রমপুর কো-অপারেটিভ উইভার্স সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে বিপুল অবদান রাখেন। সোসাইটি যাতে রেজিস্টার্ড সংগঠন হিসেবে সরকারি অনুমোদন পায়, সেই জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রথম সভাপতি ছৈনদ্দিন বেপারীকে নিয়ে ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রথম পরিচালনা বোর্ডের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। পঞ্চাশের দশকের শেষ এবং ষাটের দশকের শুরুতে তিনি দুই দফায় বিক্রমপুর কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আবদুর রহমান মাস্টার শিক্ষক সমিতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্য ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাধিকবার তার বাড়ি ঘেরাও এবং তল্লাশি করে। তারা রহমান মাস্টার ও তার তিন মুক্তিযোদ্ধা ছেলেকে গ্রেফতারের জন্য হন্যে হয়ে চেষ্টা চালায়। তিনি গোটা মুক্তিযুদ্ধকালে পালিয়ে বেড়ান। বয়সজনিত কারণে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও তিনি তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কাজে উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করেন। স্বাধীনতার পর তিনি নতুন উদ্যমে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সংগঠিত করার কাজে অবদান রাখেন।
রাজনীতির বাইরেও তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন।
উপসংহারে তার সম্পর্কে শুধু এটুকুই বলব, রহমান মাস্টার জাতীয় পর্যায়ের নেতা ছিলেন না। কিন্তু তার সময়ে তিনি তার কাজ, সততা, নিষ্ঠা এবং ত্যাগের দৃষ্টান্ত দিয়ে জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের কাছেও শ্রদ্ধার আসন পেয়েছিলেন। একজন নির্লোভ ও আত্মত্যাগে ভাস্বর রাজনৈতিক নেতা বিশেষত ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকের সন্তান হতে পেরে আমরা গর্বিত।
—-ড.নূহ-উল-আলম লেনিন। তারিখ-২৫/০৯/২০১৯