জেলা প্রশাসক জাপানীজ অতিথি নিয়ে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন 

0
33
জেলা প্রশাসক জাপানীজ অতিথি নিয়ে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন 

প্রকাশিত : রবিবার,২৩ জুন ২০২৪ ইংরেজি,৯ আষাঢ়, ১৪৩১ বাংলা (বর্ষা কাল),১৬ জিলহজ ১৪৪৫ হিজরি

বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক : মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাসুর গ্রামে বিক্রমপুর জাদুঘর আজকে (২৩ জুন রবিবার) বিকেলে পরিদর্শন করেন । উল্লেখ্য মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবুজাফর রিপন, বিপিএএ তাঁহার একজন জাপানীজ বন্ধুকে বিক্রমপুর জাদুঘর দেখানোর জন্য নিয়ে আসেন।

প্রথমেই বিক্রমপুর জাদুঘর এর পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ। জেলা প্রশাসক জাপানিজ বন্ধুর কাছে বিক্রমপুর জাদুঘর এর কিউরেটরকে পরিচয় করিয়ে দেন। একপর্যায়ে জাপানিজ অতিথির সাথে কিউরেটরের সাথে নিহঙ্গ ভাষায়/জাপানি ভাষায় আলাপ শুরু হলে সবাই একটু অন্যরকমের আনন্দ প্রকাশ করে। আনন্দের আরও বিষয় হলো জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং তাঁহার সহধর্মিণী জাপানি ল্যাংগুয়েজ কিছু কিছু জানেন সব মিলে সত্যিই অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি হয় তখন।

 মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য কর্মকর্তা সহ শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মোশারফ হোসেন এবং তাহার সহধর্মিণী বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন। কিউরেটরের সাথে ছিলেন কবি সোহেল খান এবং জাদুঘরের ম্যানেজার রেজাউল হক ও অন্যান্য কর্মচারী।

জেলা প্রশাসক বিক্রমপুর জাদুঘরের সমস্ত গ্যালারি ঘুরে ঘুরে দেখেন সঙ্গে তাঁর সহধর্মিণী, জাপানিজ অতিথি সহ সবাই বিক্রমপুর জাদুঘরের ভূয়সি প্রশংসা করেন এবং জাদুঘর এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।

কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জেলা প্রশাসকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন যে, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয় তার গুড নোটবুকে বিক্রমপুর জাদুঘর কে রেখেছেন এবং যখনই কোন অতিথি বা সচিব মহোদয় মুন্সীগঞ্জে সফরে আসেন তিনি তাদেরকে নিয়ে বিক্রমপুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন এবং করার চেষ্টা করেন। সত্যি এজন্য তাহার প্রতি জাদুঘরের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি’।

উল্লেখ্য,বিক্রমপুরের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। বিক্রমপুরের মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এ ছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য, লোকজীবন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য সামাজিক সংগঠন ‘অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন’ মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার রাড়িখাল ইউনিয়ন এর উত্তর বালাসুর গ্রামের জমিদার যদুনাথ রায়ের ১৯৬৫ সাল থেকে পরিত্যক্ত বাড়িতে “বিক্রমপুর জাদুঘর” (Bikrampur Museum) প্রতিষ্ঠা করে। সরকারকে বছরে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লীজের অর্থ পরিশোধ করে জাদুঘরটি পরিচালনা করে আসছে।

২০১০ সালের ২৯ মে জাদুঘর ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এম.পি।

ফাইল ফটো- ২০১৩ সালের ২৮ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ বিক্রমপুর জাদুঘর-(BIKRAMPUR MUSEUM) ‘-এর শুভ উদ্বোধন করেন।

২০১৩ সালের ২৮ মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ বিক্রমপুর জাদুঘর-(BIKRAMPUR MUSEUM) ‘-এর শুভ উদ্বোধন করেন।

২০১৪ সালের ২০ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি জাদুঘরটির দ্বারোদঘাটন করেন। 

পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছে অনুযায়ী বাংলাদেশে একমাত্র “নৌকা জাদুঘর” ( Boat Museum) উদ্বোধন করেন।

প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছে জাদুঘর এবং গেস্ট হাউজ বা পান্থশালা ।

বিক্রমপুর জাদুঘরের কিউরেটর নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান ,প্রতিদিন শত শত দর্শক আসছে জাদুঘর পরির্দশন করতে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাদুঘর প্রাঙ্গণে বড় বড় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন হয়ে থাকে।

বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি ৬ দিন জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্যে দুপুরে ১ ঘন্টা বিরতি দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। 

 এই উন্মুক্ত জাদুঘর প্রাঙ্গণে যা যা পাবেনঃ 

• তিন তলা বিশিষ্ট এসি গেষ্ট হাউস

• কার পার্কিং সুবিধা

• অডিটোরিয়াম/ কনফারেন্স রুম

•শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বেডরুম,আধুনিক সুযোগ সম্বলিত ওয়াশরুম

• খেলার মাঠ

• ওপেন স্টেজ

• ২টি বিশাল বিশাল দিঘি

• ৪টি শান বাঁধানো পুকুর ঘাট

• জমিদারীর কাচারী ঘর

• ইউরোপিয়ানদের জন্য গেস্ট হাউস

• ভাগ্যকূলের জমিদার যদুনাথ রায়ের মুখিমুখি ২টি ভবন এবং অন্যান্য স্হাপনা

• তিন তলা বিশিষ্ট বিক্রমপুর জাদুঘর

• নৌকা জাদুঘর

• উন্মুক্ত জাদুঘর

• আরো দেখা যাবে জমিদারদের আমীষ ও নিরামিষ রান্না ঘর এছাড়া নানা প্রজাতির দূর্লভ সব ফুল ও ফলজ গাছ গাছালি।

নিঃসন্দেহে ছবি তোলার জন্য একটি মনোরম পরিবেশ এই বিশাল খোলা মেলা জায়গা। আপনার ভ্যাকেশনের সময়গুলো ব্যস্ত শহর থেকে নিকট দূরেই সবুজের মাঝে বিক্রমপুর জাদুঘর ও গেষ্ট হাউস পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল সময় উপহার দেয়ার জন্যই আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস। মনোরম পরিবেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে আছে জমিদার বাড়িতে উপভোগ করার পর্যাপ্ত আয়োজন।

পরিত্যাক্ত সাবেক জমিদার যদুনাথ রায়ের  এই জমিদার বাড়ি নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরেন এই উম্মুক্ত জাদুঘরের কিউরেটর, তিনি বলেন, রাজা সীতানাথ রায়ের দুই পুত্র যদুনাথ রায় এবং প্রিয়নাথ রায়। চল্লিশের দশকে পদ্মার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আড়িয়ল বিলের কিনারে মনোরম ডুয়েল প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন। যদুনাথ রায়ের বর্তমানের বাড়িখাল ইউনিয়নের উত্তর বালাশুরে (সে সময় ভাগ্যকুল নামে পরিচিত ছিল) হুবহু একই ধরণের দুটি ত্রিতল ভবন নির্মাণ করেন। যার একটি ছিলো জমিদার যদুনাথ রায়ের। আর অন্যটি ছিলো তারই ছোট ভাই প্রিয়নাথ রায়ের। বিশালাকৃতির দিঘি খনন করেন, নাট মন্দির ও দূর্গামন্দির স্থাপন করেন।

পূর্বধারের ভবনে থাকতেন যদুনাথ রায় এবং পশ্চিমধারের ভবনে থাকতেন প্রিয়নাথ রায়।

তার তিন ছেলে যথাক্রমেঃ মেঘনাদ রায়, শরতচন্দ্র রায় ও সতীশচন্দ্র রায়।

এই বাড়িতে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলেন, ছিল সোয়ারেজ লাইন, বিশালাকৃতির দুটি দিঘি ছিল, বাড়ি জুড়ে ছিল বহুরকমের ফুল ও ফলের গাছ। খাপড়াওয়ার্ড খ্যাত লেখক আব্দুস শহীদ তার ‘কারাস্মৃতি’ গ্রন্থে ফুল বাগানের বর্ণনা দিয়েছেন। এখনো বাহারী নাগলিঙ্গম, বিশালাকৃতির কাঠবাদাম, বোম্বে লিচু, সুমিষ্ট আম গাছ রয়েছে। অশোক গাছটিতে এখনো ফুল ফুটলে মনে হয় ভোরে সূর্য উকি দিয়েছে। পুকুর ছিল মাছে পরিপূর্ণ, আলাদাভাবে কূপে ছিল রঙিন মাছ।

ড. হুমায়ুন আজাদ এই বাড়িটিকে নিয়ে তার ফুলের গন্ধে দূরে পালিয়েঘুম আসে না গ্রন্থে লিখেছেন- বিলের ধারে প্যারিস  শহর।

ইট পাথরের এই শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সপরিবারে/ সবান্ধব কিছুটা সময়  নিজেদের মতো প্রকৃতির কাছাকাছি উপভোগ করতে চাইলে আজই চলে আসুন। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন মোবাইল নং ০১৭১১৩৬২৯১৩। ইমেইল  bikrampurjadughor@gmail.com

ফাইল ফটো- আকাশ থেকে দেখা বিক্রমপুর জাদুঘর-(BIKRAMPUR MUSEUM)

 

 (বিজ্ঞাপন)  https://www.facebook.com/3square1

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।       

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন