জুমার নামাজের হুকুম ও শর্ত

0
20
জুমার নামাজের হুকুম ও শর্ত

প্রকাশিত :শুক্রবার,২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ইং ।।  ১০ই আশ্বিন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল)।। ৭ই সফর, ১৪৪২ হিজরী

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : শুক্রবার, সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন, জুমআর দিন। এ দিনের নামাজ আদায় অনেক ফজিলপূর্ণ। কেননা এ দিনকে ঘিরে রয়েছে মহান রাব্বুল আলামিনের অসংখ্যা নিয়ামাতের উপলক্ষ। এ গুরুত্বপূর্ণ দিনের সুনির্দিষ্ট নামাজকে জুমআর নামাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। জুমআর নামাজ আদায়ে রয়েছে কিছু হুকুম ও শর্ত। যা এখানে তুলে ধরা হলো-

জুমআর হুকুম
>> জুমআর নামাজ দুই রাকাআত। ইহা প্রতিটি মুসলিম, পুরুষ, বালেগ, বিবেকবান, স্বাধীন এবং ঘর-বাড়ি বানিয়ে একটি জনপদে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এমন ব্যক্তির উপর জুমআর নামাজ আদায় করা ফরজ।

>> জুমআর নামাজ নারী, রোগী, শিশু, মুসাফির ও দাস-দাসীর উপর ফরজ নয়। তবে এদের মধ্যে যারা জুমআর নামাজে হাজির হবে তার নামাজ যথেষ্ট হয়ে যাবে।

>> আর মুসাফির যদি কোনো স্থানে অবতরণ করে অবস্থান নেয় (যাত্রা বিরতি করে) আর সেখানে জুমআর আজান শুনতে পায়, তবে তার জন্য জুমআ আদায় করা জরুরি।

ছয়টি শর্ত এই হল:
১. মিছর (শহর) অর্থাৎ এমন জনবসতি হওয়া যেখানে হাকিম এবং বিচারক থাকেন।
কিংবা শহরতলী হওয়া, অর্থাৎ যে জায়গায় শহরবাসীদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর জন্য বহু জিনিস প্রস্তুত করা হয়।
এ শর্ত মোতাবেক ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে পল্লী অঞ্চলে জুম’আর নামাজ জায়েজ নেই।
তবে ইমাম শাফেই রহ. এবং অন্যান্য অধিকাংশ ইমামগণের মতে পল্লী অঞ্চলেও জুম’আর নামাজ আদায় জায়েজ আছে।
তবে শহরতলীতে তা জায়েজ নেই।
২. রাষ্ট্রপতি বা তার কোন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকা। তবে অধিকাংশ ইমামগণের মতে এটা শর্ত নয়।
৩. জোহরের ওয়াক্ত হওয়া।
৪. খুতবা দেওয়া।
মাস,আলা
ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে ১ বার সুবহানআল্লাহ পরিমাণ খুতবা দেওয়াই যথেষ্ট।
কিন্তু সাহেবাইনের মতে খুতবা দীর্ঘ হওয়া এবং তা আল্লাহ তালার প্রশংসা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম উপর দরুদ,
ও পবিত্র কোরানের তেলাওয়াত, মুসলমানদের প্রতি উপদেশ এবং নিজের জন্যও সমস্ত মুসলমানদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা সম্বলিত হওয়া ফরজ।
আবু হানীফা রহ. এর মতে খুতবার জন্য এসকল বিষয় (ফরজ নয় বরং) সুন্নত। এগুলো ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ।
৫. জামাত হওয়া।
ইমাম শাফেই ও আহমদ রহ. এর মতে জামাতের জন্যে চল্লিশজন হওয়া জরুরী।
আবু হানীফা রহ. এর মতে ইমাম ব্যতীত ৩ জন এবং আবু ইউসুফ রহ. এর মতে ইমাম ব্যতীত ২ জনের হলে যথেষ্ট হবে।
মাস’আলা
জুম’আর নামাজের জামাত চলাকালীন সময়ে যদি লোকজন নামাজ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। এতে লোকজনের সংখ্যা (উপরের বর্ণীত) নির্ধারিত সংখ্যা চেয়ে কমে যায়।
তাহলে ইমাম এবং অবশিষ্ট লোকদের জুম’আর নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তারা জুম’আ বাদ দিয়ে জোহর শুরু করবে।
৬. ব্যাপক আকারে অনুমতি থাকা অর্থাৎ যে কারো মসজিদে আসার ব্যাপারে কোন প্রকার বাধা নির্দেশ না থাকা।
মাস,আলা
অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক, গোলাম, মেয়েলোক, মুসাফির এবং রুগ্ন ব্যক্তির জন্য জুম’আর নামাজ ওয়াজিব নয়।
অনুরুপভাবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে অন্ধের জন্যে তাকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোন লোক নিযুক্ত থাকলে।
তার উপরেও জুম’আর নামাজ পড়া ওয়াজিব নয়। বাকি তিন জন ইমামের মতে যদি অন্ধ ব্যক্তিকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার মত লোক পাওয়া যায়অ।
তাহলে তার উপর জুম’আর নামাজ পড়া ওয়াজিব হবে। অন্যথায় ওয়াজিব হবেনা।
ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর অভিমত অনুসারে গোলামের উপরও জুম’আর নামাজ পড়া ওয়াজিব।
মাস’আলা
গোলাম অথবা রুগান্ন ব্যক্তি কিংবা মুসাফির যদি জুম’আর নামাজ কোন শহরে আদাত করে নেয়। তাহলে তা আদায় হবে এবং তাদের জিম্মায় জোহর আর বাকি থাকবে না।
মাস’আলা
শহরে বাহিরে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি যদি জুম’আর আজান শুনতে পায়। তাহলে তার জন্যে জুম’আর নামাজে শরীক হওয়া ওয়াজিব।
মাস’আলা
গোলাম, অসুস্থ ব্যক্তি এবং মুসাফিরকে জুম’আর ইমাম বানানো জায়েজ আছে।
মাস’আলা
যদি কিছু সংখ্যক মুসাফির কোন শহরে জুম’আর নামাজ আদায় করে এবং সেখানে কোন মুকীম উপস্থিত না থাকে।
তাহলে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে তাদের নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু ইমাম শাফেই ও ইমাম আহমদ রহ. এর মতে ৪০ জন স্বাধীন,মুকীম ও সুস্থ ব্যক্তির উপস্থিতি ব্যতিত জুম’আর নামাজ শুদ্ধ হবে না।
মাস’আলা
ওজরবিহীন কোন ব্যক্তি যদি জুম’আর পূর্বে জোহর নামাজ আদায় করে নেয়, তাহলে তার নামাজ মাকরুহ তাহরিমী হলেও আদায় হয়ে যাবে।
অত:পর যদি উক্ত ব্যক্তি জুম’আর নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে গিয়ে দেখে যে, ইমাম সাহেব এখনো নামাজ থেকে ফারেগ হননি।
তাহলে পূর্বের পড়া জোহর নামাজ বাতেল হয়ে যাবে। সুতরাং এখন যদি জুম’আর নামাজ না পায়, তাহলে তার জোহর নামাজ বাতেল হবে না।
মাস’আলা
মাজুর এবং কয়েদীর জন্যে জুম’আর দিনে জোহরের নামাজ জামাতে আদায় করা মাকরুহ।
মাস’আলা
যদি কেউ জুমার নামাজে ইমামকে তাশাহুদে অথবা সাহু সেজদাতে পায় এবং সে উক্ত নামাজে শরীক হয়। তাহলে সে ইমামের সালাম ফিরানোর পর দু’রাকাত পুরা করে নিবে। ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর মতে যদি উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকাতের রুকু না পায় তাহলে সে জোহরের চার রাকাত পূর্বের তাকবীরে তাহরি দ্বারাই পূর্ণ করে নিবে।
মাস’আলা
জুম’আর প্রথম আজান হয়ে গেলে জুম’আর উদ্দেশ্যে সাই করা (প্রস্তুতি নেয়া) ওয়াজিব।
আযানের পর ক্রয়-বিক্রয় হারাম হয়ে যায়।
ইমাম সাহেব খুতবা দানের উদ্দেশ্যে (স্বীয় হুজরা থেকে) বের হওয়ার পর,
কিংবা মিম্বরে আরোহণ করার পর খুতবা থেকে ফারেগ না পর্যন্ত কোন কথাবার্তা বলা বা নামাজ পড়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
ইমাম সাহেব মিম্বরে আরোহণ করার পর তার সামনে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় আজান দেয়া হবে এবং মুসল্লিগণ তার প্রতি পূর্ণ মনোযোগী হয়ে থাকবে।
ইমাম সাহেব খুতবা শেষ করলে ইকামত বলতে হবে।
মাস’আলা
জুম’আর নামাজে সুরা জুম’আ এবং সুরায়ে মুনাফিকুন পড়া সুন্নত।
অন্য রেওয়ায়েত অনুসারে সুরায়ে সাব্বি হিসমা’ এবং সুরায়ে হাল আতাকা,  পড়া সুন্নত।
মাস’আলা
একই শহরের কয়েক স্থানে জুম’আ পড়া দুরস্ত আছে। ইমাম আবু হানীফা রহ. এর এক রেওয়ায়েত অনুসারে একই শহরের কয়েক স্থানে জুম’আ পড়া জায়েজ নেই।
যদি শহরের কয়েক জায়গায় জুম’আ পড়া হয়, তাহলে শুধুমাত্র প্রথম স্থানে জুম’আ সহীহ হবে।
এ ছাড়া অন্যান্য স্থানে নামাজ সহীহ হবে না। ইমাম আবু ইউসুফ রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, যদি শহরের মাঝখান দিয়ে কোন প্রবাহমান নদী থাকে ।
তাহলে উক্ত নদীর দু’পার্শ্বে দুই জায়গায় জুম’আ পড়া দুরস্ত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..                

‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন

     জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

                   আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email – bikrampurkhobor@gmail.com

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন