প্রকাশিত : শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০ ইং ।। ২৮ চৈত্র ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক : ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া শাইখুল হাদিস মুফতি মাওলানা আব্দুল্লাহ বিক্রমপুরীর লাশ গোপনে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দাফন করা হয়েছে। সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরায় মুস্তফাগঞ্জ মাদ্রাসা মাঠে বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে তাঁকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এই জানাজায় আশে পাশের ৭/৮টি ইউনিয়ন থেকে তাঁহার ভক্তবিন্দু,মুরিদান, মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষকসহ শত শত সাধারন মানুষ অংশ নেয়।
সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. আশফিকুনাহার জানান, শুক্রবার পুরো পশ্চিম শিয়ালদি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রামটির মৃতের ভাইয়ের মুফতি জাকারিয়ার বাড়ি লকডাউন করা হয়। এই সময় মৃতের ছেলে পালিয়ে যান। আর এখানে যারা কবরে লাশ নামিয়েছেন তাদের সনাক্ত করা হয়েছে তাহাদের বাড়িও লকডাউন করা হয়েছে ।
মৃতের গেন্ডারিয়ায় বাড়ি ঢাকার লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায়,ধুপখোলা নামাপাড়া মসজিদ সংলগ্ন একটি সাত তলা ভবনের ৫ম তলার বাসিন্দা মুফতি ড.আব্দুল্লাহ বিক্রমপুরীর। এখানেই তাঁর গোসল করানো হয়েছে । ঢাকার পুলিশ মৃতের এই গ্যান্ডারিয়া বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। তার বয়স ষাট-এর উর্দ্ধে ছিল বলে তার জনৈক প্রতিবেশী জানান।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে স্বজনেরা হাসপাতালের কাউকে না জানিয়ে গোপনে লাশ নিয়ে চলে আসেন প্রথমে গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা নামাপাড়া মসজিদ সংলগ্ন এই বাসায়। মহল্লাবাসিকে বলে সে স্টোক করে মারা গেছে। এরপর বিক্রমপুরের সিরাজদিখানের পশ্চিম শিয়ালদী গ্রামে নিয়ে যায় পরের দিন সকালে। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তিসহ পুরো বিষয়টি গোপন রাখা হয়। ফলে বৃহস্পতিবার জানাজা ও দাফনের সময় অনেক লোকসমাগম ঘটে।
মাহবুব হাসান (Mahbubul Hasan) নামে একজন মাওলান ফেইজবুকে বেশ কয়েকবার মৃত্যু, জানাজার স্হান, সময় ইত্যাদি বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি ১টা স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন “ ইনশাআল্লাহ, আগামীকাল (আজ) সকাল ৭ টায় ঢাকার ধূপখোলা মাঠে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হযরত মাওলানা মুফতি আব্দুল্লাহ বিক্রমপুরী রহ. এর জানাজার নামাজের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বেলা দশটা থেকে এগারটার মধ্যে জানাজার নামাজের দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। (এলাকার কোন স্থানে জানাজা হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি)। এই আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ তথ্য জানিয়েছেন। সম্পূরক তথ্য :(৮:০০)সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। জানাজার নামাজ একটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় জানাজার নামাজ হচ্ছে না।কেবল গ্রামের বাড়িতে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।“
সিরাজদিখান থানার ওসি ফরিদউদ্দিন জানিয়েছেন, এলাকায় যাতে করোনা সংক্রামিত না হয় সে লক্ষে কাজ চলছে। ওসি জানান, মৃতের ছেলে মাসুদুর হাসানের (৩৪) সাথে তার রাতে কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, তার পরিবার আগে জানতেন না। পরে জানতে পেরেছেন যে তার বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ওসি বলেছে, কিন্তু একথা সঠিক নয়। রোগীর ফাইলে এমনকি মৃত্যু সনদে কভিড-১৯ উল্লেখ আছে।
গত বুধবার (৮ এপ্রিল) বুধবার মুফতি আব্দুল্লাহ ঢাকার ভাড়া বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বজনেরা তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেন। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন স্বজনরা। চিকিৎসকেরা উপসর্গ দেখে ধারণা করেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত। তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট।
এরমধ্যে রাতে মুফতি আব্দুল্লাহর পরিবার হাসপাতাল থেকে গোপনে লাশ বের করে গেণ্ডারিয়ায় বাসভবনে নিয়ে যান স্বজনরা। পরে বৃহস্পতিবার সকালে তারা মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানা এলাকায় নিয়ে জানাজা পড়ে মুফতি আব্দুল্লাহর দফন সম্পন্ন করে। করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তিসহ পুরো বিষয়টি গোপন রাখা হয়।