কত কম খরচে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন

0
22
কত কম খরচে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন

প্রকাশিত :মঙ্গলবার, ১৬ জুন ২০২০ ইং । ২রা আষাঢ় ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : কত কম খরচে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন তা একটি নতুন বিজনেস শুরু করতে যাওয়া উদ্যোক্তার আগ্রহের প্রধান বিষয়।

অনেক ব্যবসায়ীরা মনে করেন, অনলাইন বিজনেসে প্রোডাক্ট ছাড়া আর কোন খরচ প্রয়োজন নেই।সত্যি বলতে এই রকম গড়পড়তা ই-কমার্স বিজনেসের কোন ভবিষ্যৎ নেই।

একটি প্রফেশনাল ইকমার্স বিজনেস শুরুর জন্য প্রাথমিকভাবে কোন খরচগুলো আপনাকে করতে হবে ? কীভাবে আপনি সর্বনিম্ন খরচ করে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হিসেবে অনলাইন বিজনেস পরিচালনা করতে পারবেন?  চলুন বিস্তারিত জানি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে।

ই-কমার্স বিজনেসে প্রাথমিকভাবে যে ৬ টি খরচ আপনাকে করতে হয়।

  1. ডোমেন নাম
  2. হোস্টিং
  3. ই-কমার্স ওয়েবসাইট
  4. অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা
  5. প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি
  6. ডিজিটাল মার্কেটিং

একটি ধারনা বাজেট করা যেতে পারে–

 ডোমেন: ১,২০০ টাকা

ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইট / URL এর নাম। ইকমার্স ব্যবসা শুরু করতে চাইলে আপনার বিজনেস ওয়েবসাইটের জন্য আপনার ডোমেন নাম প্রয়োজন।

ডোমেইন নিতে খুব বেশি খরচ করতে হয় না। আপনি ৳১,১০০ থেকে ৳১,২০০ এর মধ্যে পছন্দমতো ডোমেন নাম পেয়ে যাবেন।এই ডোমেইন নাম প্রতিবছর নবায়ন করতে হয়।

GoDaddy এর মত অনলাইন সেলার বা লোকাল কোন ডোমেন ও হোস্টিং সার্ভিস প্রদানকারীর কাছ থেকেও ক্রয় করতে পারেন।

হোস্টিং: ৫,৫০০ টাকা

অনলাইনে আপনার ওয়েবসাইটটি সক্রিয় রাখতে হোস্টিং প্রয়োজন। হোস্টিং ছাড়া আপনার ওয়েবসাইট ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হবে না এবং কেউ সেটি দেখতেও পাবেনা।


সহজ ভাষায়, একটি ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ও ফাইলগুলো রাখার জন্য যে জায়গা প্রয়োজন সেই নির্ধারিত জায়গা কে বলা হয় ওয়েবসাইটের হোস্টিং বা ওয়েব হোস্টিং।

ইকমার্স ওয়েবসাইটঃ ২৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা

ইকমার্স বিজনেসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানসম্মত ই-কমার্স ওয়েবসাইট।সহজে ব্যবহার যোগ্য লাইট ওয়েট ই-কমার্স ওয়েবসাইট কাস্টমার পছন্দ করে। সহজে নেভিগেশন করা যায় এমন ইকমার্স ওয়েবসাইট ই-কমার্স সেল বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে। আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কাস্টমারদের সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত তথ্য প্রদান, সহজে পছন্দসই প্রোডাক্টটি খুঁজে পেতে সহায়তা, অর্ডার প্রক্রিয়া সহজ হলে ই কমার্স ওয়েবসাইট থেকে বেচাকেনার পরিমাণ বেড়ে যায়।


ই কমার্স বিজনেসে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি থাকে বিধায় একজন কাস্টমার আপনার ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করতে সমস্যা বোধ করলে দ্রুত অন্য শপে চলে যেতে পারে। তাই ই-কমার্স ওয়েবসাইটটি যতটা রিস্পন্সিভ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হবে তত ভাল।

প্রতিটি বিজনেসেই ষ্টকের হিসেব থাকা আবশ্যক আর বিশেষ করে অনলাইন বিজনেসে সেটি অপরিহার্য। একটি মানসম্মত ই-কমার্স ওয়েবসাইট এই সুবিধা দেয়। সাথে অর্ডার ম্যানেজমেন্ট ও কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট থাকা প্রয়োজন। আপনি যদি সস্তা কোন ই-কমার্স সাইটের কথা চিন্তা করেন তবে এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো থেকে আপনি বঞ্ছিত হবেন।

মানসম্মত ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলো অটো প্রোডাক্ট জুম, প্রোডাক্টের শর্ট ডেসক্রিপ্সন সুবিধা প্রদান করে যা দামে সস্তা ওয়েবসাইটগুলোতে পাবেন না।
চেকআউট করার সময় কাস্টমার অতিরিক্ত তথ্য দেবার জটিলতায় শেষ পর্যন্ত চেকআউট প্রসেস শেষ না করেই ওয়েবসাইট থেকে বের হয়ে যায়। গেস্ট চেকআউট অপশন থাকলে এই অসুবিধা দূর করা সম্ভব।যেখানে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য দিয়েই কাস্টমার কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারেন।

টেকনোলজি / প্ল্যাটফর্ম

আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরিতে কি টেকনোলজি ব্যবহার করছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ।প্রতিষ্ঠিত সিএমএস (যেমন ওয়ার্ডপ্রেস বা মাজেন্টো) ব্যবহার করে তৈরি সাইট কম ব্যয়বহুল।এগুলো আবার নিয়মিত আপডেট রাখতে হয়। কিন্তু কাস্টম প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করলে ইচ্ছেমত ফিচার ও ডিজাইনের সমন্নয় সাধন করা সম্ভব হয় এগুলো আপনার চাহিদামত সময়ে আপডেট করতে পারেন। বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। তাই ই-কমার্স ওয়েবসাইটটি হতে হবে মোবাইল রেস্পন্সিভ।

 

অনলাইনে অনেক ফ্রি টুলস ব্যবহার করে ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় কিন্তু সেগুলো মানহীন। বিনামূল্যে বিজনেস হয় না, ভাল বিজনেসের করতে আপনাকে উপযুক্ত প্রযুক্তির জন্য ইনভেস্ট করতে হবে।

বর্তমানে একটি মানসম্মত ই কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য আপনাকে দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা গুনতে হয়। কিছু ই-কমার্স সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান অনলাইন বিজনেসের শুরুতেই বড় খরচ না করে সীমিত খরচের বিনিময়ে আপনাকে একটি দামি ও মানসম্মত ই-কমার্স ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়েঃ ১৫,০০০ টাকা

দ্রুত,সহজ,নিরাপদ অনলাইন মূল্য পরিশোধের মাধ্যম যা কাস্টমারদের দৈনন্দিন জীবনকে আরো সহজ করে তুলেছে। বর্তমান সময়ে অনেকেই শপিংমলে বা অনলাইন কেনাকাটায় অনলাইন পেমেন্ট করাকে পছন্দ করছে। এই অর্থ লেনদেনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সাথে অনলাইন পেমেন্ট সেবাদানকারী কোম্পানি গুলোর বাণিজ্যিক চুক্তি থাকে।

কাস্টমার ক্রেডিট, ডেবিট, ভিসা,মাস্টার কার্ড সহ বিকাশ রকেট ব্যবহার করে অনলাইনে মূল্য পরিশোধ করতে পারে। কাস্টমার, সেলার ও পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস দাতাদের মধ্যে সকল লেনদেন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে এটি নিরাপদ।  এসএসএল কমার্স, ইজিপে, আই পে সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এই সেবা প্রদান করছে। এজন্য আপনাকে প্রায় ১৫ হাজার টাকা গুনতে হবে।

পেমেন্ট গেটওয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র,

  • Trade License
  • Certificate of incorporation (for limited Company)
  • Company eTIN Certificate (for limited Company)
  • Signatory’s eTIN Certificate.
  • Photo of Signatories
  • NID of Signatories
  • Article of Association (for limited Company)

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিঃ১০০০ টাকা

প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি নিয়ে আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। অনলাইনে কাস্টমার প্রোডাক্ট কেনে ছবি দেখে। একটি সঠিক ছবির গুনগতমান বেশ ভালো হয় ও রঙের অতিরঞ্জিত ব্যবহার থাকে না।

 

প্রফেশনাল প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফারের এই বিষয়গুলো ভালো জানেন। প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য প্রতিটি প্রোডাক্টের বিপরীতে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১০০০ গুনতে হয়। মডেলের স্ট্যাটাস ফটোগ্রাফারের টুলস এসব কিছুর উপর মূল্যের পার্থক্য নির্ভর করে।

মার্কেটিংঃ ৫,০০০ টাকা

প্রোডাক্ট, ই-কমার্স ওয়েবসাইট, পেমেন্ট অপশন, ছবি সব হবার পরে কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্টগুলো পৌঁছে দিতে হবে, প্রয়োজন অনলাইন মার্কেটিং।

অনেক ধরনের অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি আছে, যেমন,

  • ফেসবুক অ্যাড
  • গুগল অ্যাড
  • ইমেইল
  • এসএমএস
  • এসইও

প্রতিটি ভিন্ন মিডিয়ার জন্য খরচ ভিন্ন। আপনি একটি পরিকল্পিত মাসিক মার্কেটিং বাজেট নিয়ে যদি এগুতে থাকেন তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফলতা পাবেন। এই বাজেট হতে হবে বাস্তবিক লক্ষ্যমাত্রার সাথে সংগতিপূর্ণ। অপরিকল্পিত ভাবে প্রোডাক্টের মার্কেটিং করে অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না। প্রতিমাসে বিজনেসের আকার ভেদে নুন্নতম ৫ হাজার টাকা মার্কেটিং বাজেট রাখতে হয় তবে ভাল ফলের জন্য বাজেট বড় হতে হবে।

এবার যদি সবগুলো খরচ একসাথে হিসেব করলে এর পরিমান দাঁড়ায় ২২৭,৭০০ টাকা। দুই লক্ষ সাতাশ হাজার সাতশত টাকা। এটি অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় পরিমান অর্থ যা অনেকের পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। (এটা একটি ধারনা বাজেট)

পরিশেষে,

কম খরচ বা বেশি খরচ গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রয়োজন আপনার বিজনেসের জন্য উপযুক্ত ইনভেস্টমেন্ট। আপনার বিজনেসের প্রযুক্তিগত ও মার্কেটিং পর্যালোচনা ও কীভাবে আপনার বিজনেসটিকে বড় করে তুলবেন সেই বিষয়ে পরামর্শ পেতে ভালো অভিজ্ঞ ই-কমার্স কনসালট্যান্টদের সাথে কথা বলুন। 

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন