প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬মার্চ ২০২১ইং।। ২ চৈত্র ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।।২ শা’বান ১৪৪২হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১৫ দিনে মৃত্যু ও নতুন রোগী শনাক্ত তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১ মার্চ পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তিন জনের। ১৫ দিনের ব্যবধানে সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাফে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের, যা গত ৯ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে মাসের শুরুতে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৫১৫ জন। ১৫ দিনের ব্যবধানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৭৩ জন, যা তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলছেন, হঠাত্ করে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাওয়া স্বাস্থ্যবিধি না মানারই খেসারত। সামনে আরো খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। বাঁচতে হলে সবারই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যদিকে করোনার চিকিত্সা ম্যানেজমেন্ট প্রোটোকল ঠিক আছে কি না, সেটা দেখা দরকার। কারণ এখন দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে দ্রুত।
এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ইউরোপ-আমেরিকার মতো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা দেশকে সেই পর্যায়ে নিতে চাই না। দেশকে ভালো রাখতে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে আবারও কঠোর হতে হবে। মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে; মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে ইতিমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং আবহাওয়াজনিত কারণে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই করোনার সংক্রমণ নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বাধ্যতামূলক হতে হবে। এক্ষেত্রে মানুষ সচেতন না হলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে। গণজমায়েত ও জনসমাবেশ কমানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার সংক্রমণ হঠাত্ করে বৃদ্ধি পাাওয়ায় সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও ওষুধ রাখাসহ ডাক্তার-নার্সদের আগের মতো প্রস্তুত রাখতে হবে। দুই মাস সংক্রমণ কম থাকায় চিকিত্সার আকার ছোট করে নিয়ে আসা হয়েছিল। এখন তা আবারও বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত, হাসপাতালে আইসিইউ না পেয়ে এখন মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। রবিবার ঢাকা নার্সিং কলেজের শিক্ষক শিরিনা পারভীন সময়মতো আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে মারা গেছেন।
মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, করোনা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। মাস্ক না পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েক মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। অনেকে মনে করছেন, করোনা যাওয়ার আগে মরণকামড় দিয়ে যাবে। সামনে মেডিক্যাল ও বিসিএস পরীক্ষা-স্বাস্থ্যবিধি এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের বর্তমান ধরনটি হলো দ্রুত আক্রান্ত, মারাও যাচ্ছে দ্রুত।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, দেশে করোনার আগের ঢেউ ছিল ধীরগতির, এখন দ্রুত বাড়ছে। এ থেকে রক্ষা পেতে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় সংক্রমণ কম, সেসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলা যেতে পারে। তবে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঠিক হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে রোগী বাড়ছে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো তৃণমূলে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা ইতিমধ্যে রাজশাহী বিভাগে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রথমে সতর্ক এবং পরে জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। সব জেলায় তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত আরো ১ হাজার ৭৭৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ জন হয়েছে। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ২৬ জনকে নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যু দাঁড়াল ৮ হাজার ৫৭১ জনে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’