প্রকাশিত:শুক্রবার ০৭ জুন ২০১৯।২৪জ্যৈষ্ঠ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ। ৩সাওয়াল ১৪৪০ হিজরি।
বিক্রমপুর খবর ডেস্ক:সবুজ গাছগাছালিতে ঢাকা চারপাশ। তার মাঝে বিশাল বিশাল দুটি দীঘি। শানবাঁধানো ঘাটও আছে। আরও আছে সাম্পান নৌকা। দীঘির পাড়ে অনেকগুলো পুরনো বাড়ি। বাড়িগুলি পরিত্যক্ত। আর এ পুকুরপাড়েই পুরনো বাড়িগুলোর পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। পুকুরের চারদিকে শ্বেতপাথরে নির্মাণ করা শানবাঁধানো ঘাট। ঘাট ভীড় করেছে সাম্পান নৌকা। চারদিকে পাখিদের কলকাকলি শব্দে মুখরিত। পুকুরের অথৈ জলে হারিয়ে গেছে চোখজোড়া। এই পুকুরখানা না কি প্রতীকী নৌকা জাদুঘর৷ জমিদার যদুনাথ রায়ের এ বাড়িটির স্মৃতি রক্ষার্থে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা জুড়ে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে বিক্রমপুর জাদুঘর। আপনি
সপরিবারে ও সবান্ধব আপনি বিক্রমপুর জাদুঘরে ঘুরে আসতে পারেন।
বিক্রমপুর জাদুঘরের দুই দীঘির মাঝে তিন তলা পান্থশালা বা গেস্ট হাউস।
এছাড়া দীঘির মাঝে একটি সাম্পান নৌকা সহ কয়েকটি নৌকা ভাসানো আছে- এটি “নৌকা জাদুঘরের” করার প্রাম্ভিক প্রস্তুতি বা প্রতীকী। জাদুঘরগুলো এবং পান্থশালা বা গেস্ট হাউস উদ্বোধন/ভিত্তি প্রস্তর করেন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আর এ জাদুঘরগুলো রয়েছে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার উত্তর বালাসুর গ্রামে।
“বিলের ধারে প্যারিস শহর”
জমিদার যদুনাথ রায়ের এই বাড়িটিকে লেখক হুমায়ুন আজাদ নাম দিয়েছিলেন বা তাঁহার অনুভূতিতে লিখেছেন “বিলের ধারে প্যারিস শহর”।“ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না” গ্রন্থে লেখক ভাগ্যকূলের শেষ জমিদারদের বাড়ীকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন৷ তখনকার সময়ে জমিদারের ব্যাবহার করা জেনারেটর,লাইট পোস্ট, পানির পাম্প ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
জমিদার যদুনাথ রায়ের বাড়ী
সুন্দর জরাজীর্ণ কারুকাজে সজ্জিত পাশাপাশি দুটি বাড়ী৷ আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কাচারী ঘর, দূর্গামন্দির, লক্ষ্মীমন্দির। ৷ নানান প্রজাতির দুর্লভ সব ফুল ও ফলজ গাছগাছালি, লতা-গুল্মে ভরপুর প্রাঙ্গন। দেশ ভাগের পর ভাগ্যকূলের বেশির ভাগ জমিদার দেশত্যাগ করলেও রয়ে গেলেন যদুনাথ রায়। এই মাটির প্রতি তার অন্যরকম টান ছিল। ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পর সরকার থেকে চাপ আসে তার দেশ ত্যাগের ব্যাপারে। কথিত আছে, দেশ ত্যাগের পূর্বে তিনি এ দেশের মাটি অঙ্গে মেখে কেঁদেছিলেন। কলকাতা যাবার পর বেশি দিন বাঁচেননি ভাগ্যকূলের শেষ জমিদার। নবাবগঞ্জের কোকিলপ্যারী জমিদার বাড়ী, তেলিবাড়ী, উকিল বাড়ী সমূহও ভাগ্যকূলের জমিদারদের ছিল৷ এখন সবই কালের স্মৃতি।
“বিক্রমপুর জাদুঘর”
আমাদের বিক্রমপুরের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতির ধারক বাহক বিক্রমপুর জাদুঘর৷ বিক্রমপুরের হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা হয়েছে এই জাদুঘরে। একতলার দুইটি গ্যালারি যদুনাথ রায় ও স্যার জগদীস চন্দ্র বসুর নামে উৎর্সগিত৷ আর দ্বিতীয় তলার গ্যালারিটি মুক্তিযোদ্ধা গ্যালারি নামে নামকরণ করা হয়েছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন হাজার বছরের ইতিহাস৷ নাটেশ্বর ও রঘুরামপুর বিহার থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন এই জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে।বিক্রমপুরের বিখ্যাত মানুষদের ছবি ফ্রেমে প্রদর্শিত হয়েছে।
খেলাধুলা করারমত সবুজ মাঠ।
“বিক্রমপুর জাদুঘর”
(যদুনাথ রায়ের বাড়ী)
বলাশুর, শ্রীনগর, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ।
পরিচালনায়-
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন
কেন্দ্রীয় কার্যালয়
কনকসার, লৌহজং, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ।
যোগাযোগ করুন– কিউরেটর – অধ্যাপক মোঃ শাহজাহান মিয়া-০১৭১২৫১৯৭৩১
ম্যানেজার/অফিস সহকারী- হারুন অর-রসিদ-০১৭১২৫১৯৭৩১
পরিচিতি:
বিক্রমপুরের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। রাজধানী হিসেবে ঢাকার বয়স মাত্র চারশত বছর। কিন্তু প্রাচীন পূর্ববঙ্গ বা সমতটের রাজধানী হিসেবে বিক্রমপুরের খ্যাতি কমপক্ষে ১২০০-১৫০০ বছরের। বিক্রমপুরের মাটি খুড়ে পাওয়া গেছে হাজার বছর আগের নৌকা, কাঠের ভাস্কর্য, পাথরের ভাস্কর্য, টেরাকোটাসহ অসংখ্য অমূল্য প্রত্নবস্তু। এছাড়াও বিক্রমপুরের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক মনীষী। বিক্রমপুরের এইসব অতীত ঐতিহ্য ও প্রত্ন নিদর্শনাদি সংরক্ষণ করা সর্বোপরি প্রদর্শনের জন্য “অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠা করেছে “বিক্রমপুর জাদুঘর”।
কিভাবে আসবেন?
ঢাকার গুলিস্তান মাজারের সামনে থেকে বালাসুরের উদ্দেশে “আরাম” বা “নগর” পরিবহণের বাস ছাড়ে কিছুক্ষণ পরপর।ভাড়া ৬৫ টাকা। সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। আবার পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে “সেবা” পরিবহণ যোগেও আসতে পারেন। বালাসুর চৌরাস্তা নেমে রিকশায় যাওয়া যাবে জাদুঘরে। ভাড়া ২০ টাকা। খাওয়ার জন্য বালাসুর বা উত্তর বালাসুরে আছে কয়েকটি রেস্তোরাঁ।
সময়সূচী:
শনিবার থেকে বুধবার সকাল ৯:৩০ টা দুপুর ১:০০ টা এবং দুপুর ২:০০ টা থেকে বিকাল ৪:০০ টা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি।
শুক্রবার দুপুর ২:০০ টা থেকে বিকাল ৪:০০ টা পর্যন্ত।
প্রবেশমূল্য:
কোন প্রবেশমূল্য নেই,সবার জন্য উন্মুক্ত।
এই বিক্রমপুর জাদুঘরে প্রত্ন ও সাংস্কৃতিক সামগ্রী দান করে আপনিও হতে পারেন জাদুঘর গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার।