প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ইং ।। ৪ঠা পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)। ৩রা জমাদিউল-আউয়াল,১৪৪২ হিজরী।বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে ‘ভাসু বিহার’। ভাসু বিহার বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্য একটি।
উপজেলার এই স্থানটি স্থানীয়দের কাছে নরপতির ধাপ নামে বেশ পরিচিত। ভাসুবিহার শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার এবং বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ও মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বিহার বন্দরের কাছে নাগর নদীর তীরে অবস্থিত।
বিখ্যাত চীনা পর্যটক হিউন সাঙ (সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগ) তার ভ্রমণ বিবরণীতে বর্ণনা করেছেন যে তিনি মহাস্থানগড় থেকে ৪ মাইল দূরে একটি মঠ দেখেছিলেন।
তিনি ভাসু বিহার কে ‘পো- শি- পো’ মন্দিরের অবশেষ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। হিউন সাঙ এই মন্দিরটিকে তার অঞ্চল হাইট এ বিখ্যাত মন্দির হিসাবে বর্ণনা করেন। কমপক্ষে সাত শতাধিক ভিক্ষু সন্ন্যাসীরা এই বিহারে অবস্থান করছিলেন এবং বহু বিদ্বান ভিক্ষু ও বুদ্ধিজীবী একত্রিত হত।
বিহারটিতে মূল তিনটি মূল স্থাপত্য রয়েছে। এর মধ্য দুটি বৌদ্ধদের ধ্যানের জন্য ব্যবহার করছিলেন ও এটি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিল। আর অন্যটি ছিল প্রার্থনার জন্য।
এখানে আরও একটি জায়গা রয়েছে যার নাম ‘টুটা রাম পণ্ডিতার ধাপ’ বা ‘পণ্ডিত ভিটা’ জায়গাটার আরেক নাম ‘ভাসু বাজার’। এছাড়া এর পাশে একটি দীঘি (বড় পুকুর) রয়েছে। এই জায়গাটি বৌদ্ধদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।
জানা গেছে, তৎকালীন শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনারের মেয়ের বিবাহ এই বিহারে হয়েছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সালে এখানে খনন কাজ শুরু হয় এবং পরপর দুটি অধিবেশনে এটি পুনরায় চালু করা হয়।
খননকালে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ কর্তৃক বেশির ভাগ পাল বংশের প্রাচীন ১৮টি সিলমহর এবং দুটি ইট নির্মিত কাঠামো আবিষ্কার করা হয়েছিল। এই অবকাঠামোটি ৪৯ মিটার উত্তর-দক্ষিণ এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার রং এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের ছয়টি কক্ষ রয়েছে। কতোগুলোর সামনের দিকটি বারান্দা দ্বারা বেষ্টিত এবং পূর্ব পার্শ্বের মাঝখানে একটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে।
বড় মঠটি দেখতে ছোট বিহারের মত লাগে তবে ক্ষেত্র ফলে বৃহত্তর এবং আরও কক্ষ রয়েছে। সন্ন্যাসীদের ছোট কক্ষগুলির চারপাশে একটি খোলা যায়গা রয়েছে। মনে করা হয় খোলা যায়গা একটি মিলয়াতন ছিল।
এখানে প্রায় ৮০০টি প্রাচীন জিনিস পাওয়া গেছে। এর মধ্য ক্ষুণ্ণ মূর্তি, ফলক ও সিল, মূল্যবান পাথরের জপমালা, অলংকরণের ইট ও ট্যাবলেট, মাটির প্রদীপসহ পাত্রের টুকরো উল্লেখযোগ্য।
বিহার থেকে খানিক দূরে সম্রাট অশোক এমন জায়গায় একটি স্তূপ তৈরি করছিলেন যেখানে বুদ্ধদেব দেবদেবীদের কাছে তার শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। সেই জায়গার খুব কাছে বুদ্ধের জন্য একটি রেস্ট হাউস ছিল।
সেখানে এখনও বুদ্ধের পায়ের চিহ্ন রয়েছে।
হিউন সাঙ আরও বর্ণনা করেছিলেন যে, খানিক দূরে অবালোকাইটশ্বরের একটি মূর্তি রয়েছে। এটি তার অতিরিক্ত জাগতিক ঘটনা দ্বারা অলৌকিক শক্তি প্রকাশ করবে। তবে অশোক স্তূপ এর অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
কানুহাম অনুসারে, ভাসুবিহার গ্রামের অশোকের ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য বহন করছে নরপতির ধাপ। বর্তমানে দেশ ও বিদেশের অনেক পর্যটক ভাসুবিহার এর নিদর্শন এক পলক দেখার জন্য ছুটে আসেন।
বগুড়া শহর ও উপজেলা সদর থেকে সিএনজি, অটোরিকশা, ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ে আসা যায় ভাসু বিহারে। সব মৌসুমে ভিড় থাকলেও শীতকালে পর্যটকদের আনাগোনা একটু বেশি থাকে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’