প্রকাশিত:শনিবার,১০ আগস্ট ২০১৯ ইং ||২৬শে শ্রাবণ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ।
বিক্রমপুর খবর:অনলাইন ডেস্ক:পবিত্র হজের খুতবায় মুসলিম উম্মাহর শান্তি,ঐক্য ও সমৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন খতিব। দীর্ঘ লিখিত খুতবায় তিনি সঠিক ইসলামের পথে মুসলিমদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়াও করেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরায় এবার হজের খুতবা দেন বিশিষ্ট আলেম, ড. শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান আলে আশ-শায়খ। তিনি সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য। পাশাপাশি খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন হাদিস কমপ্লেক্সর পরিচালক।
মক্কা নগরীর ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে মসজিদ নামিরায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে শনিবার শেষ হয়েছে পবিত্র হজ। ধবধবে সাদা ইহরাম কাপড় পরা ২০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জোহর ও আসরের নামাজ এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করেন। মুসলিম জাতির দৃষ্টি ছিল আরাফাতের ময়দানে, কোটি হৃদয়ের স্পন্দন ছিল জাবালে পাহাড়কে ঘিরে, দেশ-দেশান্তরের লাখো হজযাত্রী যেন শত কোটি মুমিনের প্রতিনিধি হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেওয়ার দৃপ্ত শপথ নেন।
সৌদি স্থানীয় সময় দুপুর সোয়া ১২টায় আরাফাতের মসজিদ নামিরায় হাজিদের উদ্দেশ্যে পবিত্র হজের খুতবা পাঠ করেন নতুন খতিব ড. মুহাম্মাদ বিন হাসান আল-শাইখ। এই খুতবায় মুসলিম উম্মাহর জন্য থাকে নানা দিক নির্দেশনা। ৩০ মিনিট ব্যাপী প্রদত্ত খুতবার পর পরই স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে জোহরের সময় একই সঙ্গে জোহর ও আসরের কসর সালাতে ইমামতি করেন তিনি।
১৯৮১ সাল থেকে আরাফার ময়দানের খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন দৃষ্টিহীন ইমাম শাইখ আবদুল আজিজ। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে গিয়েছেন। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো হজের খুতবা দেন শাইখ আবদুর রহমান আস-সুদাইস। ২০১৮ সালে আরাফার ময়দানে হজের খুতবা দেন বিচারপতি শাইখ হুসাইন ইবনে আবদুল আজিজ ইবনে হাসান।
এবারের হজের খুতবায় হারামাইন শরিফাইনের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে খতিব সৌদি রাজপরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজসহ রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করেছেন। খুতবায় মুহাম্মদ বিন সালমানের কথাও উল্লেখ করেন। তার দীর্ঘ হায়াত ও কল্যাণের জন্যও দোয়া করা হয়।
হজের খুতবায় মুসলমানদের আমল পরিশুদ্ধ করার প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়। পারস্পরিক আচরণ, লেনদেন পরিশুদ্ধ করার তাগিদ দেয়া হয়। আমলের ত্র“টির কারণে মুসলিমরা দুর্যোগের শিকার হবে এমন সতর্কতাও দেয়া হয়।
কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন উদ্ধৃতি উল্লেখ করে মুসলিম উম্মাহকে তাকওয়া অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়। কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মতো জীবন গঠনের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়। পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনকে জীবনের পাথেয় বানাতে বলেন খতিব।
সৃষ্টির প্রতি দয়া ও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সৃষ্টির প্রতি দয়ার্দ্র হলে আল্লাহ তার প্রতি দয়াশীল হবে বলে হাদিসের বাণী উদ্ধৃত করেন। ধৈর্য ধারণের কথা বলা হয়। এক মুমিন আরেক মুমিনের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার তাগিদ দিয়ে বলা হয়, এর দ্বারা আল্লাহর রহমত অর্জিত হবে। মুসলমানদের জাকাত আদায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়। আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে বলা হয়। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হতেও আহ্বান জানানো হয়।
খুতবার শুরুতে তিনি আল্লাহতায়ালার প্রশংসা, রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ওপর দরুদ পাঠ করেন। উপস্থিত হাজীদের সুস্থতা কামনা করেন। তাদের জন্য দোয়া করেন।
খুতবায় রাসূলের (সাঃ) একটি হাদিস পড়েন, যার মূলকথা হলো-কোনো মুসলমানের যদি সক্ষমতা অর্জন হয়, তাহলে জীবনে একবার হলেও তাকে অবশ্যই হজ করতে হবে।
শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান বলেন, তাওহিদ ও খতমে নবুওয়তের সাক্ষী ইসলামের মৌলিক রোকন। এছাড়াও নামাজ ও জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। জাকাতের মাধ্যমে গরিব অসহায়দের ব্যাপক কল্যাণ সাধিত হয়।
হজের খুতবায় আরও বলা হয়, আল্লাহ তায়ালার হুকুম কখনও পরিবর্তন হয় না। আল্লাহ তায়ালা মানুষ এবং জীন জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ জন্য তাওহিদ ও আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়টি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
মুসলিম উম্মাহর মুক্তির উপায় উল্লেখ করে শায়খ মুহাম্মদ বিন হাসান এ বছরের হজের খুতবায় বলেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালার রহমতের কথা বারবার বলা হয়েছে। আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরাই মুক্তির একমাত্র উপায়। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
খুতবার শেষ দিকে হজের আহকাম জানিয়ে দেন খতিব। মুসলমানদের ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
খুতবার মধ্য দিয়ে শেষ হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। খুতবার পরপরই মসজিদে নামিরায় এক আজানে জোহর এবং আসরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে লাখো লাখো হাজির সময় কাটবে দোয়া, মোনাজাত, আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে। সূর্যাস্তের পর তারা মাগরিবের নামাজ না পড়ে রওয়ানা করেন মুজদালিফার উদ্দেশ্যে। সেখানে একসঙ্গে মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করে রাত যাপন করেন। আজ ফজরের পর হাজিরা রওয়ানা করবেন মিনার উদ্দেশ্যে। সেখানে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন। শয়তানকে পাথর মারবেন। এছাড়া বায়তুল্লাহয় গিয়ে তওয়াফ করবেন।
এবার বাংলাদেশ থেকে (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন হজ পালন করেন। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ ১৫০টি দেশ এবারের হজে অংশ নেয়। পবিত্র অনুভব আর ঐশী আবেগে উদ্ভাসিত লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে আরাফাতের সব প্রান্তর ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। জাবালে রহমতে (রহমতের পাহাড়ে) কেবল মানুষ আর মানুষ। ইসলামের ইতিহাসে হজ পালনে শুভ্র বসনে, অভিন্ন অবস্থানে অগণিত নারী পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় সেই ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’, ‘লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ানিন মাতা লাকাওয়ালমুলক লা শারিকালাক’।
খুতবা সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে। অনেক হজ এজেন্সি নিজ উদ্যোগে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজীদেরকে খুতবার অনুবাদ শোনানোর ব্যবস্থা নেন।