প্রকাশিত: সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ইং।। ১লা ফাল্গুন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।। ১১ রজব,১৪৪৩ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলা ১লা ফাল্গুন। সারাবিশ্বে দিবসটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয়। আর আমাদের দেশে পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন হিসেবে পালিত হয়।শীতের শেষে ফাল্গুনের প্রথম দিনে তরুন তরুনীরা তাদের পছন্দের পোষাক পরে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়ায়। ফুলে ফুলে রাঙা বাসন্তী পোষাকে আজ যুগলদের মনের উচ্ছ্বাস ও আবেগকে বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের মানুষই ভালোবাসার এই দিনে একসঙ্গে সময় কাটাবেন। দিনটি পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হলেও ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসে এখন বাঙালি জীবনের সঙ্গেও মিশে গেছে।
বিভিন্ন দিবসের মধ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একটি। ১৪’ই ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে সারা পৃথিবীতে উৎযাপন করে। বিষেশত, এই দিনটিকে কেন্দ্র করে, প্রেমিক-প্রেমিকা তার প্রিয় মনের মানুষটিকে গিফট, সেলিব্রেট, প্রপোজ, মেসেজ, কবিতা, ছন্দ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রিয় মানুষের কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করে যা ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস নামে পরিচিত।
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস প্রবর্তন করেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালে শফিক রেহমান তার সম্পাদিত মাসিক যায়যায়দিন পত্রিকায় ১৪ ফেব্রুয়ারিকে উপলক্ষ করে ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ নামে একটা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন। সে সংখ্যার পুরোটাজুড়ে ছিল দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাঠানো লেখকের ভালোবাসার গল্প। তখনও বা কে জানতো, একদিন বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ভালোবাসা দিবস রীতিমত উৎসবে রূপ নেবে!
ভালোবাসা দিবস যুগলদের মনের এই উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের মানুষই ভালোবাসার এই দিনে একসঙ্গে সময় কাটাবেন। দিনটি পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হলেও ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসে বাঙালি মনের ভালোবাসাও যেন পায় নতুন রূপ।
আজকের এ ভালোবাসা শুধুই প্রেমিক আর প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত হতে পারে সবাই। চলবে উপহার দেয়া-নেয়া।
রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারা দিন ঘোরাঘুরি করে কাটাবে ভালোবাসার মানুষগুলো। তাদের পরনে লাল, নীল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি বিভিন্ন রঙের পোশাক আর সাজসজ্জায় ভালোবাসার দিনটি যেন বর্ণিল রঙে রঙিন হয়ে উঠবে।
তবে অনেকেই জানে না ভালোবাসা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিলো বা কবে কোথায় কেন এ দিবস পালন শুরু হয়েছিল। আবার কারো জানা থাকলেও মূল বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করার মতো বাস্তব অবস্থার মুখোমুখি হতে পারে না। ভালোবাসা দিবসের কিছু অজনা ইতিহাস নিয়েই আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন-
২৭০ ঈসায়ি সনের কথা। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনীহা সৃষ্টি হয় বলে মনে করতেন তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তাই তিনি নারী-পুরুষের বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। খৃষ্টান গীর্জার পুরোহিত ‘ভ্যালেন্টাইন’ সম্রাটের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে গোপনে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে দিতেন। একসময় বেচারা ভ্যালেন্টাইন ধরা পড়ে যান এবং সম্রাটের কাছে ভ্যালেন্টাইন একজন মারাত্মক অপরাধী হিসেবে গণ্য হয়। শাস্তিস্বরূপ ভ্যালেন্টাইনকে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন।
২৭০ ঈসায়ি সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। শাস্তিস্বরূপ ভ্যালেন্টাইনকে যে কারাগারে কারা বন্ধি করে রাখেন, সেই কারাগারের জেলারের মেয়ের কাছে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার পূর্বে একটি চিঠি লিখেন। চিঠির নিচে লেখা ছিল ‘লাভ ফর ইয়োর ভ্যালেন্টাইন’। কিন্তু জেলারের মেয়েকে আদৌ ভালোবেসেছিলেন কি না তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টধর্মের প্রাধান্য সৃষ্টি হলে ভ্যালেন্টাইনকে ‘সেইন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ৩৫০ ঈসায়ি সনে যে স্থানে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল সেখানে তাঁর স্মরণে একটি গীর্জা নির্মাণ করা হয়। এরপর ৪৯৬ ঈসায়ি সনে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেইন্ট ভ্যাল্টোইন ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
যদিও ভালবাসা নিয়ে মানব মস্তিষ্কে কিছু সমীকরুণ আর হৃদয়ের গহনে কিভাবে তার উৎপত্তি হয় তা এখনো নির্ণয় করা বিজ্ঞানীদের জন্য সম্ভব হয়নি।
শোনা যায়, পৃথিবী থেকে যত সত্যিকারের প্রেমিক প্রেমিকা মারা যায় তাদের ভালোবাসা নাকি জমা থাকে সূর্যের কাছে, তাইতো সূর্যের রং লাল। ভোরের সূর্যোদয় ভালোবাসার মানুষের মনে রং ছড়ায়। তাইতো বিশ্বের সব প্রেমিক ভোরের সূর্যের ছড়িয়ে দেয়া আলোর কাছ থেকে দীর্ঘ নিশ্বাসে ভালোবাসা সংগ্রহ করে। প্রকৃতি থেকে নেয়া এ ভালোবাসা বিলিয়ে দেয় সারাদিন একে অন্যের মাঝে। যদিও এই মিথের উৎপত্তি কোথা থেকে তা অজানা আজও। সবাইকে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা।