আজ পহেলা বৈশাখ,‘ওরে আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’

0
55
আজ পহেলা বৈশাখ,‘ওরে আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’

প্রকাশিত :মঙ্গলবার,  ১৪ এপ্রিল ২০২০ ইং ।। ১লা বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ।

বিক্রমপুর খবর :অনলাইন ডেস্ক : আজ  মঙ্গলবার১৪২৭ বঙ্গাব্দ বাংলা শুভ নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’।আবহমান কাল থেকেই বাঙালীর অতীত ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত বাংলা নববর্ষ।এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব।জাতীয় জীবনে এ গুরুত্বও অপরিসীম।বাংলা সনের প্রথম দিন,তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি আমাদের দেশে শুভ নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়ে।

পহেলা বৈশাখ বাঙালী জাতির ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক হিসেবে আজও বাঙালীর হৃদয়ের মণিকোঠায় মিশে আছে। পহেলা বৈশাখে রমনীরা নানা সাজে সজ্জিত হয়ে ঘুরে বেড়ায় আপন মনে। রবীন্দ্রনাথ পহেলা বৈশাখ কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন,”এসো হে বৈশাখ,এসো এসো ”গানটির মাধ্যমে। কিন্তু এবারের বৈশাখের আবাহন হয়ে উঠেছে,রবীন্দ্রনাথেরই কথা দিয়ে ‘ওরে আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’।

ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে

আজ  সূর্যের নতুন আলোর সঙ্গে এসেছে নতুন বছর,বঙ্গাব্দ ১৪২৭। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

পহেলা বৈশাখ তথা ডিজিটালি বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সীমিত আকারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’- এ প্রতিপাদ্যে সীমিত আকারে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দুই দিন আগে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেয়া হয়। এতে জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নবসজ্জার অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে আজ পহেলা বৈশাখ ভোর ৭টা থেকে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছ থেকে সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এ অনুষ্ঠানের ফ্রেশ ফিড পাবে।

এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে, যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আরেকটি ধারণকৃত অনুষ্ঠান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত একটি বক্তব্য ছাড়াও বৈশাখের গান, নৃত্য, আবৃত্তি আয়োজন থাকবে। ফেসবুকে ডিজিটালি বর্ষবরণের আয়োজন করেছে উদীচী। অন্যদিকে জনসমাগম না করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্য করে এবারে বর্ষবরণের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবারের পহেলা বৈশাখের রংটাই পাল্টে দিয়েছে। ভাইরাসটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করেছে। জনসমাগম এড়িয়ে চলাই এই ভাইরাস প্রতিরোধের সর্বোত্তম পন্থা। তাই সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ ছুটি বলবৎ থাকবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ছুটি বলা হলেও কার্যত লকডাউন অবস্থার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে দেশ। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এমনিতেও অনেক জেলা, শহর, এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে মানুষের চলাচল। একেবারেই প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সে কারণে অন্যান্য সময় পহেলা বৈশাখের আগে যে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে তা এবার অনুপস্থিত। দোকানপাট বন্ধ বলে পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্য হালখাতার আয়োজন নেই, নেই বৈশাখী কেনাকাটা। নেই পান্তা-ইলিশ আয়োজনের তোড়জোড়।

এই মহাদুর্যোগের মধ্যেই বৈশাখ আসায় সরকারি আদেশেই এদিন খোলামাঠে সকল আয়োজন বন্ধ। পহেলা বৈশাখের অন্যতম আয়োজন রমনা বটমূলে প্রভাতী আয়োজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, শিশু পার্কের সামনে ঋষিজের অনুষ্ঠানসহ সব বন্ধ করা হয়েছে। বাঙালি আজ ঘরে বসেই তার সাধ্যমতো খাবার আয়োজন করবে। পড়বে নতুন পোশাক। মোবাইল মেসেজ বা অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করে নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নেবে। ঘরে বসে থাকলেও তাদের মনে সত্যি সত্যি খেলে যাবে বৈশাখের রং।

ছায়ানট সভাপতি সন্জীদা খাতুন জানিয়েছেন, মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জনসমাবেশ ঘটিয়ে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন না করার সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী বলেন, গত তিন বছর ছায়ানট যে অনুষ্ঠান করেছে তা বিটিভির কাছে ধারণ করা আছে। সেখান থেকে নির্বাচিত গান নিয়ে এক ঘণ্টার অনুষ্ঠান সাজানো হবে। তবে ছায়ানট সভাপতির ভাষণটি ধারণ করে তা সম্প্রচার করা হবে এই অনুষ্ঠানে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্প্রচার করবে। এছাড়া, অন্য বেসরকারি টেলিভিশন ইচ্ছা করলে এ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারবে।

সম্রাট আকবরের সময় থেকেই বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের ধারা চলে চলছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা-বাণিজ্যে একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তারা এ দিনে শুভ হালখাতা করে পুরানো হিসেব চুকিয়ে নতুনভাবে ও নতুন আঙ্গিকে পহেলা বৈশাখে যাত্রা শুরু করেন।

সম্ভবত ,তুর্কি বিজয়ের পর বঙ্গদেশে হিজরি সন চালু হয়েছিল। চন্দ্র হিসেবে হিজরি সন ধরা হয়। চন্দ্রবর্ষে দিন ও মাস প্রতি ৩৩ বছরে একবার করে আবর্তিত হয়। যেমন রমজান মাসের রোজা, শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সব ঋতুতেই ঘুরে আসে। চান্দ্রমাস বা হিজরি সনের দিন ও মাস নির্দিষ্ট ঋতু বা ফসল তোলার মওসুমে স্থির না থাকায় খাজনা তোলার নির্দিষ্ট তারিখের সাথে ফসল তোলার সময়ে হেরফের হয়ে যায়।

তাই ৯৬৩ হিজরি সনে (১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) ভারতবর্ষে আকবরের শাসনামলে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে প্রজাদের ফসল তোলার সময়ের প্রতি দৃষ্টি রেখে ফসলি সন হিসেবে বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয়। সম্রাট আকবরের উপদেষ্টা আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীর হিজরি সনের চান্দ্রবছরের হিসেবের পরিবর্তে সৌরবর্ষের হিসাব সংযোজন করে বাংলা সনের উদ্ভাবন করেন।

১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দের বাংলা মুঘল সা¤্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ স¤্রাট আকবর বাংলা সন সংক্রান্ত এক ফরমান জারি করেন। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত আকবরের সময় থেকেই। সে সময় বাংলার কৃষকেরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরদিন নববর্ষে ভূ-স্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন।

বাংলা দিনপঞ্জীর সঙ্গে হিজরী ও খ্রিষ্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিষ্টীয় সন ঘড়ি হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে।

ইংরেজি দিন শুর হয় মধ্যরাতে। পহেলা বৈশাখ রাত ১২ টা থেকে শুরু না সূর্যদোয় থেকে থেকে শুরু এটা নিয়ে অনেকের মতবিরোধ রযেছে। ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যদোয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমি এ নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২ টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু হয়।

আমরা ছোট বেলায় গাঁয়ের মেলায় যেতাম। সেখানে মাটির হাঁড়ি, পাতিল,খেলনা ও মিষ্টি-মন্ডা কিনতাম। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই মেলায় এসে আনন্দ-ফূর্তিতে ফেটে পড়তাম। যা ধূসর স্মৃতির আয়নায় আজ অম্লান। পহেলা বৈশাখের আগের আমেজ এখন আর নেই বললেই চলে। আমরা নিজস্ব সংস্কৃতিকে তেমন একটা প্রাধান্য দিচ্ছি না নানা অযুহাতে।

ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে দু’বছর ধরে বাংলা শুভ নববর্ষ পহেলা বৈশাখ পালিত হয়ে আসছে। এতে বিভিন্ন কর্মসূচিও রয়েছে। সরকার সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২০% বেশাখি ভাতা প্রদান করেছেন। দেশের সকল সরকারি,বেসরকারি স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসায় মঙ্গল যাত্রা ও বৈশাখের নানা কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিশ্বের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন। ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখ হয়। কিন্তু এবার ভিন্ন বাস্তবতা। প্রকৃতি বড় রুষ্ঠ। করোনার প্রাদুর্ভাবে পর্যুদস্ত পৃথিবী। সদা দাপিয়ে বেড়ানো মানুষ ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়েছে। পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ নেই। একে অন্যের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলেছে শুধু। এ অবস্থায় আজ বর্ষ শুরুর দিনে সামাজিক দূরত্ব মেনে নিয়েও, মানসিকভাবে পরস্পরের কাছে থাকার শপথ নেবে বাঙালী।

রমনার বটমূলে যাওয়া হবে না। ছায়ানটের শিল্পীদের সঙ্গে গান গাওয়া হবে না। আয়োজন করা হবে না মঙ্গল শোভাযাত্রার। তবে বাঙালী তার মনের রংটুকু ধরে রাখবে। হতাশায় না ডুবে সবাই মিলে একসঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে। ভবিষ্যতে আরও সুন্দর আরও বর্ণাঢ্য নববর্ষ উদ্যাপনের স্বার্থেই এবার ঘরে বসে নিজেদের মতো করে উদ্যাপন করবে বাঙালী।

আজকের অন্যরকম পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। আরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

ইতিহাসটি সবার জানা, বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তাঁর আমলেই প্রবর্তন হয় বাংলা সাল। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। বঙ্গাব্দের মাস হিসেবে বৈশাখের প্রথম স্থান অধিকার করার ইতিহাসটি বেশি দিনের না হলেও, আদি সাহিত্যে বৈশাখের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।

আবহমান কাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। এক সময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনও বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেন গৃহিণীরা। অদ্ভুত মুন্সিয়ানায় আল্পনা আঁকেন মাটির মেঝেতে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন সবাই। স্নান সারেন। নতুন পোশাক পরেন। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যান। ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। থাকে পিঠা-পুলির আয়োজন। নববর্ষ উপলক্ষে হাটে-মাঠে-ঘাটে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। নানা রকম কুটির শিল্প, খেলনা, মিষ্টিসহ বাহারি পণ্যে সাজানো হয় স্টল। থাকে নৌকাবাইচ, লাঠিখেলা কিংবা কুস্তির মতো ঐতিহ্যবাহী আয়োজনও।

নাগরিক জীবনেও বিপুল আনন্দ যোগ করে পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণের দিন সব শহরেই আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের। ধর্ম বর্ণ ভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মাতে বাংলা। ষাটের দশকে বাঙালী চেতনাবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে রাজধানী শহর ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হয় বৈশাখ উদ্যাপন। এর মাধ্যমে বাঙালী আপন পরিচয়ে সামনে আসার সুযোগ পায়। পরবর্তী সময়ে বাঙালীর রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে পহেলা বৈশাখের। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিবসটি বর্তমানে বাঙালীর জাতিসত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে গভীরভাবে বিরাজ করছে।

আজকের এই বিশেষ দিনে সবার একটাই চাওয়া, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বিশ্ব করোনাভাইরাসমুক্ত হোক। জীবনকে খুঁজে পাক নতুন আনন্দে। ‘যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে,/মুক্ত করো হে বন্ধ’-নতুন বছরে এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা। শুভ নববর্ষ।

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন