প্রকাশিত: রোববার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ইং।। ১ লা ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।। ০১ রজব ১৪৪২হিজরী
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : আজ পহেলা ফাগুন, ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। শীতের আড়ষ্টতা ভেঙে জেগেছে প্রকৃতি। দখিনা বাতাসে ভাসছে পাখিদের গান। হৃদয়ের ব্যাকুলতা নিয়ে এসেছে বসন্ত। নবপ্রবর্তিত বর্ষপঞ্জিতে গতকাল ছিল মাঘের শেষ দিন। তবে ষড়্ঋতুর এদেশে প্রতি বছরের মতো প্রকৃতিতে এসেছে ফাগুন। ক্যাম্পাস, সড়কমালা, পথঘাট, বইমেলা, পার্ক-উদ্যান-খোলা প্রাঙ্গণগুলোতে দেখা গেছে প্রাণোচ্ছ্বাসে ঋতুরাজ বসন্ত বরণের মুখরতা। বাসন্তীরাঙা বসন আর ফুলের শোভায় সেজে ঘর থেকে বেরিয়েছে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীদের মাথায় ছিল গাঁদা ফুলের রিং। হলুদ শাড়ি। আমের মঞ্জরিত মুকুলে ছিল মৌমাছির গুঞ্জরণ, বাগিচায় ফুলের বাহার আর এই নগরেও কোকিলের কুহুতানও থেমে ছিল না। অভ্যাসবশত অনেকে চারুকলার বকুলতলায় গিয়ে হতাশ হয়েছেন। সেখানে বসন্ত বরণের সাংবাত্সরিক যে উত্সব তা হয়নি কাল। কারণ সরকারি নবপঞ্জিতে কাল বসন্ত আসেনি।
বাংলা বর্ষপঞ্জিতে সংশোধনের কারণে এখন থেকে বাংলা ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন ও ভালোবাসা দিবস একই দিনে পড়ছে। এযাবত্ ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ফাল্গুন মাসের প্রথম দিন পালিত হতো, আর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় ভালোবাসা দিবস। তবে আজ থেকে দুটি দিবসই বাংলাদেশে একই দিনে পড়ল। বাংলার বসন্তের সঙ্গে পশ্চিমা খ্রিষ্টানদের সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে।
কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন আগ থেকেই। শুকনো পাতা ঝরে জন্ম নিয়েছে নতুন কচি পাতার। আজ সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত এসেছে নবযৌবনের ডাক দিয়ে। ছড়িয়ে দিয়েছে রঙের খেলা।
সোনালি রোদের ছোঁয়ায় পলাশগুলো আজ জেগে উঠবে। মৌমাছিদের গুঞ্জরণ, মাতাল হাওয়া ছুঁয়ে যাবে তনুমন। বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলের রঙেই আজ সাজবে তরুণ-তরুণীরা। তরুণীরা পরবে বাসন্তী রঙের শাড়ি। খোঁপায় গুঁজবে ফুল আর হাতে পরবে কাঁচের চুড়ি। তরুণরাও বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি বা ফতুয়া পরে নামবে বাংলার পথে ঘাটে। শুধু শহরেই নয়, বাংলার গ্রামীণ জনপদেও আজ ঝিরি ঝিরি বাতাসে ধরা দেবে বসন্ত।
এ বসন্ত শুধু শুধু উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তরঙিন স্মৃতির কথাও মনে করিয়ে দেয়। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন বা একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
বাঙালির জীবনের সঙ্গে একাকার হয়ে আছে বসন্ত। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে।
প্রাচীন আমল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করে থাকেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়কাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়।
প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বসন্ত বরণ’ উৎসব। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর ‘বসন্ত বরণ’ উৎসবটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’