প্রকাশিত: শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩।। ১৪শ্রাবণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)।। ১০ই মহর্রম,১৪৪৫ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক :
‘নীল সিয়া আসমান, লালে লাল দুনিয়া,-
‘আম্মা! লা’ল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া!’
কাঁদে কোন্ ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে,
সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে!
রুদ্র মাতম্ ওঠে দুনিয়া-দামেশ্ কে-
‘জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে?’
‘হায় হায় হোসেনা’, ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,
তল্ ওয়ার কেঁপে ওঠে এজিদেরো পঞ্জায়!’
—কাজী নজরুল ইসলাম
মহররম’ হিজরি বছরের প্রথম মাস। এই মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। বছরের প্রথম মাস আশুরা অত্যন্ত সম্মানিত। এর রয়েছে ঐতিহাসিক তাৎপর্য। অসংখ্য কালজয়ী ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা।
আরবি ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দশম। শুধু উম্মতে মুহাম্মদিই নয়, পূর্ববর্তী অনেক উম্মত ও নবীর অবিস্মরণীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল এই দিনে। গুরুত্বপূর্ণ এই দিনকে ঘিরে অনেক কুসংস্কার, ভুল বিশ্বাস ও কাজের চর্চা রয়েছে মুসলিম সমাজে; যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন। ভিত্তি রয়েছে এমন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আমল—
হিজরি সনের মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরায় বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সা.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। সেই থেকে মুসলিম বিশ্বে কারবালার শোকাবহ ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়।
নবীর পরিবারের সদস্যরা শাহাদাতের কারণে তাদের জন্য দোয়া করা, দরুদ পড়া এবং তাদের কাছ থেকে সত্যের ওপর অটল থাকার শিক্ষা গ্রহণ করা। এটাই মূলত আশুরা শিক্ষা।
আশুরা উপলক্ষে দুই দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব। মুসলমানরা মহররমের ১০ তারিখের আগে বা পরে এক দিন বাড়িয়ে রোজা রাখার কথা হাদিস শরিফে এসেছে। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) আমাদের, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। আর এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।’ (মুসলিম: ১১২৮)।
এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতন ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে; তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজসাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে; হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে; আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদন নেই।
তবে এ দিন ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা হতে পারে। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারীদর জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে। ইসলামের বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা দোষণীয় নয়।
আশুরার দিনে যথাসাধ্য খাবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করা। যথাসম্ভব ভালো খাবার খাওয়া। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারা বছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির: ১০০০৭; বায়হাকি: ৩৭৯৫)
স্মরণ রাখতে হবে, মহররম মাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিভিন্ন কারণে। প্রাক-ইসলামি যুগেও মহররমের ঐতিহ্য বিদ্যমান ছিল। আর আশুরার দিনের ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে কারবালার ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি। রচিত হয়েছে শোকাভিভূত এক নতুন অধ্যায়। তবে, কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনাই আশুরার একমাত্র ও আসল প্রেরণার উৎস নয়।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, জাহেলি যুগে মক্কার কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোজা রাখত এবং রাসুল (সা.)-ও আশুরার রোজা রাখতেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩২) কাজেই আশুরার সুমহান ঐতিহ্যকে ‘কারবালা দিবসে’র ফ্রেমে বন্দি করা কখনোই উচিত নয়।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তিনি আশুরার দিনে ইহুদিদের রোজা পালন করতে দেখলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন যে, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কোন দিন যে তোমরা রোজা পালন করছো? তারা বলল: এটা এমন এক মহান দিবস যেদিন আল্লাহ মুছা (আ.) ও তার সম্প্রদায়কে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ ডুবিয়ে মেরেছিলেন। মুছা (আ.) শুকরিয়া হিসেবে এ দিনে রোজা পালন করেছেন। এ কারণে আমরাও রোজা পালন করে থাকি। এ কথা শুনে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের চেয়ে আমরা মুছা (আ.)-এর অধিকতর ঘনিষ্ঠ ও নিকটবর্তী। অতঃপর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম রোজা পালন করলেন ও অন্যদের রোজা পালনের নির্দেশ দিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)।
তাজিয়া মিছিলে দা, তরবারি বহন আতশবাজি নিষিদ্ধ
পবিত্র আশুরার মিছিল উপলক্ষ্যে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদেশ জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। আদেশে বলা হয়, তাজিয়া মিছিলে পাইক দলভুক্ত ব্যক্তিবর্গ দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে অংশগ্রহণ করে, যা ক্ষেত্রবিশেষে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। তাছাড়া মহরম মাসে পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এগুলো সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ডিএমপি কমিশনার।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com
আমাদের পেইজ এ লাইক দিন শেয়ার করুন।
জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor
আপনার আশেপাশে সাম্প্রতিক খবর পাঠিয়ে দিন email bikrampurkhobor@gmail.com