প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ইং।। ৮ই পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।। ৭ই জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪২ হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক, জাতীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের দুই বারের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার (২৩ ডিসেম্বর)।
২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা ৬৯ বছর বয়সে মারা যান এ বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যার মৃত্যুর সংবাদে সেদিন কেঁদে উঠেছেন বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব। অশ্রুবন্যায় ভেসেছিল নিজ জেলা শরীয়তপুর।
সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী আব্দুর রাজ্জাক তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাঙালির স্বাধিকার, স্বাধীনতা, শান্তি ও সামাজিক মুক্তির আন্দোলনে। ছাত্রজীবন থেকে আমৃত্যু তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রথমসারির সংগঠক ও নেতা। ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৬৬-১৯৬৭ ও ১৯৬৭-১৯৬৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জননেতা আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭০ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৩, ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। ১৯৯১-১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ২টি করে আসনে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আব্দুর রাজ্জাক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ’৭১-এর ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুখী সুন্দর অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে প্রয়াত জননেতা আব্দুর রাজ্জাকের অনন্য অবদান বাঙালি জাতির স্মৃতিতে অম্লান থাকবে।
মরহুম আব্দুর রাজ্জাকে মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, পরিবার এবং বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। আজ সকাল ৯ টায় বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শ্রদ্বাঞ্জলি ও পুস্পস্তবক অর্পণ এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং মরহুমের রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
বর্ণাঢ্য এ রাজনীতিবিদের জন্ম ১৯৪১ সালের ১ আগস্ট শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে। বাবা নাম ইমাম উদ্দিন এবং মায়ের নাম বেগম আকফাতুন্নেছা। তিনি ১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং পরে মাস্টার্স পাস করেন। এরপর তিনি এলএলবি পাস করেন এবং ১৯৭৩ সালে আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিল’র নিবন্ধিত হন। ঢাকা কলেজ থেকেই শুরু করেন রাজনৈতিক জীবন। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক জীবনে পাকিস্তান আমলে আইযুব খানের শাসনামলে ১৯৬৪ সালে প্রথম তিনি গ্রেফতার হন এবং ’৬৫ সাল পর্যন্ত কারাবাস ছিলেন। কারাগার থেকেই মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর ৬ দফা আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬৭ সাল থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকরা হত্যা করার পর আব্দুর রাজ্জাক পুনরায় গ্রেফতার হন। ’৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি কারাবন্দী ছিলেন। সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৭ সালে আব্দুর রাজ্জাককে আবারো কারাবাস থাকতে হয়।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আব্দুর রাজ্জাক ভারতের মেঘালয়ে মুজিব বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার (মুজিব বাহিনীর ৪ সেক্টর কমান্ডারের একজন) ছিলেন। তিনি মুজিব বাহিনীর একজন সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষকও ছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন। আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যু দিন পর্যন্ত তিনি শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’