আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ

0
9
আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ

প্রকাশিত: রবিবার, ৭ মার্চ ২০২১ইং।। ২২শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল)।। ২২ রজব ১৪৪২হিজরী

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন লড়াই-সংগ্রাম, বহু প্রাণের ত্যাগ-বিসর্জন ও আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতির নিকট উপস্থিত হয় আজকের অবিস্মরণীয় এ দিনটি।

এই দিনেই তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত, বিশ্বনন্দিত মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ফুঁসে ওঠা জনসমুদ্রে রচনা করেছিলেন এক অমর কবিতার আসর। বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের, পরিত্রাণের, মুক্তির, স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরেন সেই অমর কবিতায়।

এমনই এক মহাকাব্যিক বক্তৃতা অগ্নি সম্ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর অমর কবিতায় এঁকেছেন সেই অগ্নিঝড়া দেদীপ্যমান মহানায়কের মঞ্চে আবির্ভাবের চিত্রটিকে এভাবে —

‘শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে ,

রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে

অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন ৷

তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল ,

হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার

সকল দুয়ার খোলা ৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী ?

গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর – কবিতা খানি :

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ’৷..’

৭০-এর ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাঁর দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যপারে নানা রকমের টালবাহানা ও ষড়যন্ত্র শুরু করে।

পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি নেতা জেড এ ভুট্টো ও পাকিস্তান সামরিক চক্রের দীর্ঘ ষড়যন্ত্র ও টালবাহানার এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার বুঝে নিয়েছিলেন যে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে শাসন ক্ষমতা যুদ্ধ করেই ছিনিয়ে আনতে হবে; তার বিকল্প নাই।

মার্চের শুরু থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের বাতাস স্বাধিকার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের নানা রকমের অত্যাচার-নিপীড়ন-হত্যাকাণ্ডে গর্জে ওঠে বাঙালি জাতি সর্বত্র। এমন এক কঠিন সংকটময় পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ রেসকোর্সে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন এবং পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁর বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন,

‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধুর এই তেজদীপ্ত ঘোষণাই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি। দীর্ঘ ২৬ মিনিটের সেই ঐতিহাসিক ভাষণই দেশের মুক্তিকামী মানুষের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সাহস ও উদ্দীপনা যোগায়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল দিকনির্দেশনা জাতির সম্মুখে তুলে ধরেন তাঁর বক্তৃতায় । বেলা সোয়া তিনটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবি ও কালো কোট পরিহিত শেখ মুজিব মঞ্চে এসে দাঁড়ালে বীর জনতা করতালি ও ‘জয়বাংলা’ স্লোগানের মধ্যদিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু আহবান জানালেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।’

তিনি ঘোষণা করেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই। আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি- তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।”

তাঁর বারুদকণ্ঠের তেজে উজ্জীবিত জনসমুদ্র থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল স্লোগান, “জাগো জাগো- বাঙালি জাগো”, “পাঞ্জাব না বাংলা- বাংলা বাংলা”, “তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা”, “তোমার নেতা আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব”, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।”

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য’ এর অংশ হিসেবে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।

দিবসটি উপলক্ষ্যে:

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পলিত হবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের দিনটিকে ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

 

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনসহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হবে।

সব সরকারি ও বেসরকারি এমপিওভুক্ত ননএমপিও স্কুল-কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

এছাড়া এখন থেকে ৭ মার্চ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে কূটনৈতিক মিশনে উড়বে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পতাকা বিধিমালা, ১৯৭২’ সংশোধন করে ৭ মার্চকে পতাকা উত্তোলন দিবসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর হাতিরঝিল, আহসান মঞ্জিলসহ দুই সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে আতশবাজির আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। গতকাল শনিবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে গণপূর্ত অধিদফতর প্রতিবারের মতো এবারও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সজ্জিত করছে। ঢাকা শহরের সকল প্রবেশ পথে (কমলাপুর রেলওয়েস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, বিমানবন্দর, বাস টার্মিনাল) সজ্জিত করা হবে এবং তোরণ নির্মাণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ লেখা থাকবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা ও উপজেলায় আলোকসজ্জাকরণ এবং ঐতিহাসিক ৭ মার্চ লেখা সম্বলিত তোরণ নির্মাণের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত, অর্কেস্ট্রা, ডকুড্রামা, নৃত্যনাট্য ইত্যাদি থাকবে। এ দিবস উপলক্ষে ডকুমেন্টারি তৈরি করে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শূণ্য ঝুঁকি নিশ্চিত করে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করে দিবসটি উদযাপনের ব্যবস্থা নেবে এবং অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা হয় সেসব স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বিষয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠান করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

নিউজটি শেয়ার করুন .. ..             

   ‘‘আমাদের বিক্রমপুরআমাদের খবর

আমাদের সাথেই থাকুনবিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’

Login করুন : https://www.bikrampurkhobor.com

আমাদের পেইজ লাইক দিন শেয়ার করুন।    

জাস্ট এখানে ক্লিক করুন। https://www.facebook.com/BikrampurKhobor

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন