আজ একই দিনে পদ্মায় গিলে ফেলেছে দুটি তিনতলা বিদ্যালয়

0
47
আজ একই দিনে পদ্মায় গিলে ফেলেছে দুটি তিনতলা বিদ্যালয়

চাঁদপুর ও শিবচরে নদীভাঙন পদ্মার পেটে দুটি তিনতলা বিদ্যালয় ভবন

প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০ইং ।। ৮ই শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।

বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চলের একটি গ্রাম নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দিতে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি চরাঞ্চলের বাতিঘর।

চরের ছোট ছোট প্রায় ২৪ টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। এই বিদ্যালয়ের কারণেই চরের ওই সকল গ্রামে পৌছে গেছে শিক্ষা। জানা গেছে, ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। এটিই ছিল চরাঞ্চলের একমাত্র দৃষ্টিনন্দন, বহুতল ভবন ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত উচ্চ বিদ্যালয়।
গতকাল বুধবার রাতে তিনতলা ভবনটি হেলে পড়ে। আজ বৃহস্পতিবার পুরোপুরি তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি।

অন্যদিকে চাঁদপুরের পদ্মায় বিলীন হলো চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে জোয়ারের পানি বৃদ্ধির পরে ধীরে ধীরে ভবনটি হেলে পড়ে পদ্মা নদীতে। একই সাথে স্কুল এলাকার লক্ষ্মীরচরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকার প্র্রায় ৪শ’পরিবার ভাঙন শুরু হওয়ায় তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে।স্কুলটি দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।

গত কয়েকদিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রথমে ভবনটি পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলেও আর শেষ রক্ষা হয়নি। এর আগে ২০০০ সাল থেকে ওই বিদ্যালয়টি ১০বার পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়।
 
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহ সরকার বলেন, বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় ইউনিয়নের একমাত্র বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া হুমকির মধ্যে পড়েছে।
 

এমনিতেই প্রতিবছর প্রমত্তা পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা থাকেন এই ইউপির বাসিন্দারা। ভিটেবাড়ি হারিয়ে এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের দিন কাটছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে রাজরাজেশ্বর ইউপির প্রায় ৫ শতাধিক বসতবাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

এতে রক্ষাপায়নি ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ছোট-বড় বাজার। গত ১৭ জুলাই নদীর করালগ্রাসের মুখে পড়ে তিনতলাবিশিষ্ট নবনির্মিত রাজরাজেশ্বর ওমর আলী হাই স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টারটি। এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার এটি পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

ওমর আলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক সফিউল্লাহ জানান, আমাদের ঐতিহ্যবাহী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রায় ১১ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এবং ইউপিবাসীর কথা চিন্তা করে এখানে আধুনিক স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু তীব্র ভাঙনের মূখে আজ সেটিও নদী গিলে সাবার করলো।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, প্রতি বছর নদী ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। চাঁদপুরের মধ্যে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটি একটি দুর্গম এলাকা। পদ্মার ভয়াল থাবায় বিলীন হয়ে গেছে পুরো চর।

স্থানীয়রা বলছেন, এ ভাবে চললে হয়তো এক সময় এই ইউনিয়নের কোন চিহৃ কেউ খুঁজে পাবে না। সংশ্লিষ্টরা আমাদের দিকে না তাকলে আমরা কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো।

রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী জানান, প্রবল স্রোতের কারণে এ ইউপির চর ও ভুমি ভাঙনের মুখে পতিত হচ্ছে। প্রচণ্ড ঢেউ এবং ঘূর্ণিস্রোতের কারণে স্কুলটিসহ জনগনের বসতঘর ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাবুল আখতার বলেন, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নটি চারপাশে পদ্মা-মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত। বর্তমানে পদ্মা-মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি ও প্রচণ্ড স্রোতে ভবনটি তলিয়ে গেছে। এই ভবনটি নির্মাণের পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো পরামর্শ নেয়া হয়েছে কিনা তা এই কর্মকর্তা অবগত নন।
 
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা বলেন, স্থায়ী কোন বাধ নির্মাণ করা ছাড়া কোনো কিছুই রক্ষা করা সম্ভব নয়। ভবন কিংবা এলাকা ভাঙন রোধে বাধ নির্মাণের বিকল্প নাই।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..      

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার কমেন্টস লিখুন
দয়া করে আপনার নাম লিখুন