প্রকাশিত: শুক্রবার,৮ জানুয়ারি ২০২১ইং।। ২৪শে পৌষ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ(শীতকাল।। ২৩শে জমাদিউল-আউয়াল,১৪৪২হিজরী।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : আগামী পাঁচ বছর ইলিশ রপ্তানি করা যৌক্তিক হবে না। এমনটিই বলেছেন বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। খবর বিবিসি বাংলার।
তিনি বলেন, এখনও গ্রামের অনেক মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পারে না। তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশ খাওয়ার সুযোগ করে দিতে চাই। তারপর ইলিশ রপ্তানির কথা ভাবা যাবে।
দু’হাজার বিশ সালের অক্টোবরে সরকার দুই বছরের মধ্যে এক লাখ টন ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সে অবস্থান থেকে সরে আসার যে ইঙ্গিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর কথায় পাওয়া যাচ্ছে তাতে ধারণা করা যাচ্ছে যে ইলিশ রপ্তানি নিয়ে সরকারের মধ্যে ভিন্ন মতামত রয়েছে।
কেন এখনই ইলিশ রপ্তানি চায় না সরকার
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলছেন, বাংলাদেশে ২০১০ সালে দেশীয় মাছের উৎপাদন ছিল প্রায় ৩১ লক্ষ মেট্রিক টন, যা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ মেট্রিক টন।
তিনি জানান, ২০১০ সালে ইলিশের উৎপাদন ছিল প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন, এখন উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৫.৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখনকার মত চললে আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদন সাত লক্ষ টনে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ এখন ইলিশ উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে।
মন্ত্রী বলছেন, যেভাবে উৎপাদন বেড়েছে তারপরেও দেশের সব মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পারছে না। আমার মনে হয় আগে দেশের সব মানুষের কাছে ইলিশ পৌঁছাতে চাই আমরা, তারপর রপ্তানির কথা ভাবা যাবে।
তবে এখন মা ইলিশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেয়া, জাটকা নিধন বন্ধ করার মত উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রাখা গেলে ইলিশ আরও অনেক বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
মি. করিম বলেন, এজন্য আগামী পাঁচ বছর ইলিশ রপ্তানি করাকে আমি ও আমার মন্ত্রণালয় যৌক্তিক মনে করি না।
কিন্তু অক্টোবরে দু’বছরের মধ্যে এক লাখ টন ইলিশ রপ্তানির পরিকল্পনা সরকার কীভাবে করেছিল?
এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বা আমদানির সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নেয়, সে সিদ্ধান্ত আমরা নেই না। কিন্তু আমরা আমাদের মতামত ইতিমধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।
রপ্তানির জন্য যথেষ্ট ইলিশ কি আছে?
বাংলাদেশে ২০১২ সালে সরকার ইলিশসহ সব ধরনের কাঁচা মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু পরে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ইলিশ মাছ বাদে অন্য মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
এরপর ২০১৪ সালে ভারত থেকে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। সে সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইলিশের রপ্তানি মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা তোলা হয়নি।
গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসবের সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের নয়টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ভারতে এক মাসের জন্য পূজা স্পেশাল হিসেবে ১,৪৭৫ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল।
সীমিত আকারে ওই রপ্তানি করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল এবং রপ্তানির জন্য মাছের আকার ৮০০ থেকে ১২০০ গ্রামে নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবার প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালে মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট থেকে দেশের চাহিদা পূরণের পর ইলিশ রপ্তানি করা যেতে পারে এমন একটি সুপারিশ দেয়া হয়।
মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান বলছেন, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর এই সময়ে দেশে ইলিশের উৎপাদন অনেক বাড়ে। যে কারণে একটা অংশ ওই সময় অবৈধ পথে পাচার হয়ে যায়। সে কারণে আমরা বলেছিলাম যে দেশের চাহিদা মেটানোর পর ওই সময়ে ইলিশ রপ্তানি করা যায়।
এছাড়া মহামারির মধ্যে পানিতে দূষণের মাত্রা কম থাকায় এবং মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য গত কয়েক বছর থেকে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ মাছ ধরার ওপরে যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকে, তার ফলে আসছে বছরে মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
কিন্তু মৎস্য মন্ত্রী মি. করিম বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও এখনও দেশের সব মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না।
সেক্ষেত্রে একটি বাধা ইলিশের দাম। গ্রাম পর্যায়ে এখনও ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম বেশি বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
মন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে ইলিশের বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ একদিকে মানুষ দাম বেশি বলছে, আবার জেলেরা পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না—এমন অভিযোগও রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে এই মূহুর্তে কেবল ভারতে ইলিশ মাছ রপ্তানি হয়। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে সীমিত পরিমাণে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে।
এর বাইরে হিমায়িত মাছ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেসব দেশে থাকেন সেখানে কিছু কিছু ইলিশ পাঠানো হয়।
তবে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মৎস্য রপ্তানিকারকেরা আবেদন করছেন বলে জানা যাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে আগামী সপ্তাহে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠক করার কথা রয়েছে।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর–আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন–বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’