প্রকাশিত : সোমবার, ১০ আগস্ট ২০২০ইং ।। ২৬শে শ্রাবণ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ ।।
বিক্রমপুর খবর : অফিস ডেস্ক : ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস এর বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।
মাটির নিচ থেকে বিক্রমপুরের এবং নরসিংদীর উয়ারি-বটেশ্বরে প্রাচীন সভ্যতা আবিষ্কারে গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান তিন বছরের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করবেন।
ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৬ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি গঠিত হয়। বিশ্বের ১৪১টি দেশ এ প্রতিষ্ঠানের সদস্য। ইউনেস্কোর এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী জাদুঘরবিদদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশ্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং গবেষণায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এই সফলতায় অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। এছাড়া আরও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য,বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, মননশীন গবেষক-প্রাবন্ধিক,কবি,লেখক অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভাপতি ড.নূহ-উল-আলম লেনিন।
এ বিষয়ে সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা আমার জন্যে খুবই গর্বের ব্যাপার। বিশ্বের ১৪১টি দেশ এই সংগঠনের সদস্য। আমার লিডারশিপে আমি চেষ্টা করব বাংলাদেশের জাদুঘরগুলোতে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে। আমাদের জাদুঘরগুলোতে বহু ঘাটতি রয়েছে। আমার চেষ্টা থাকবে কীভাবে জাদুঘরগুলোকে গবেষণা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত করা যায়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। আমার একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। যদি আমার সহকর্মীরা এবং বাংলাদেশ সরকার আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে, তাহলেই একটা ভালো পরিবর্তন সম্ভব।
রবিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে পাঠানো এক অভিনন্দন বার্তায় উপাচার্য ফারাজানা ইসলাম বলেন, অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস এর বাংলাদেশের জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্মান ও গৌরবের।
উপাচার্য আশা প্রকাশ করেন যে, অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান তার দায়িত্ব পালনকালে নিজের সুনাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম প্রসারেও ভূমিকা রাখবেন।
অধ্যাপক ড.সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ আবিষ্কারে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। তার নেতৃত্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা নরসিংদীর বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত উয়ারী ও বটেশ্বর নামের দুটি গ্রামব্যাপী একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান আবিস্কার করেন। ধারণা করা হয় এটি মাটির নিচে অবস্থিত একটি দুর্গ-নগরী।
এছাড়া বিক্রমপুরে অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ উদ্ধারে ২০১১ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব জরিপ ও খনন কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে সদর উপজেলার রঘুরামপুর গ্রামে চাপা পড়ে থাকা হাজার বছরের পুরোনো প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার আবিস্কার হয়। এ বিহারটি ‘বিক্রমপুর বিহার’নামে পরিচিত বলে দাবি করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বরে এ বছরের এপ্রিলে আবিস্কৃত হয় বাংলাদেশের বৃহৎ বৌদ্ধস্তূপ। পিরামিড আকৃতির এ বৌদ্ধস্তূপটি ভারতবর্ষের বড় বড় স্তূপ যেমন-সাঁচি, ভারহুত, অমরাবতীর সমগোত্রীয়। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিস্কারের মাধ্যমে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের প্রত্নস্থান দক্ষিণ এশিয়ার শেষ শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বঐতিহ্যে জায়গা করে নেবে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব খনন ও গবেষণা কার্যক্রমের পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।
গত বছর জানুয়ারি ও এপ্রিলে আবিস্কৃত হয়‘সেন রাজবাড়ি’ও ‘পিরামিড আকৃতির বাংলাদেশের বৃহৎ বৌদ্ধস্তূপ’। আবিস্কৃত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল পরিদর্শন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ তার বক্তব্যে বলেন, “নাটেশ্বরে আবিস্কৃত হাজার বছর আগের প্রাচীন সভ্যতার এ প্রত্নতত্ত্ব ও বৌদ্ধ ধর্মের সমাধি বিশ্বঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে”।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য,বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, মননশীন গবেষক-প্রাবন্ধিক, কবি, লেখক অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পর্ষদের সভাপতি ড.নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন অধ্যাপক ড.সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বিক্রমপুরের প্রত্নসম্পদ আবিষ্কারে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। বিক্রমপুরের ১১শ’বছরেরও বেশি পুরনো প্রাচীন বৌদ্ধ নগরী, প্রাচীন সভ্যতা, বিক্রমপুর বিহার ড.সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এর সহযোগিতায় হয়েছে। বিক্রমপুর পেয়েছে তাহার হারানো গৌরব “প্রাচীন বিক্রমপুরের নতুন ইতিহাস”।
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..