প্রকাশিত:শনিবার,১৪ জানুয়ারি ২০২৩।।৩০ পৌষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (শীতকাল)।।১৯ জমাদিউস সানি,১৪৪৪ হিজরি।।
বিক্রমপুর খবর : অনলাইন ডেস্ক : দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখের বেশি সচল ওয়াই-ফাই রাউটার রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ আইপিভি-৬ (ইন্টারনেট প্রটোকল ভার্সন-সিক্স) সমর্থন করে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ তথা ১৪ লাখের বেশি সমর্থন করে না। প্রশ্ন হলো, আইপিভি-৬ চালু হলে এই বিশাল সংখ্যক রাউটারের কী হবে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি রাউটারের লাইফ সাইকেল (জীবন চক্র) তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। ফলে দেশের সব রাউটার আইপিভি-৬ সমর্থিত হতে এই সময় প্রয়োজন হবে। তার আগে এটা করতে হলে বিশাল সংখ্যক রাউটার বাদ দিতে হবে।
প্রযুক্তি পণ্যের বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দেশে এলসি খোলার ওপর কড়াকড়ি আরোপ থাকা, ডলারের সংকট, প্রযুক্তি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদির কারণে রাউটারের আমদানি নেই বললেই চলে। ফলে আগামী তিন থেকে সাড়ে তিন বছরে এই সমস্যার সমাধান হবে না বলে তারা মনে করছেন। এসব কারণে দেশে আইপিভি-৬ পুরোপুরি বাস্তবায়নে আরও চার বছর লেগে যেতে পারে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ইন্টারেনেট ব্যবহারকারীর (১২ কোটির বেশি) মধ্যে সংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ আইপিভি-৬ ব্যবহারকারী। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত এপনিকের (এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার) ৪৯তম সম্মেলনে বাংলাদেশ ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশে আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের হার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। দুই বছর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এপনিকের (এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার) নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পলিসি চেয়ার সুমন আহমেদ সাবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইপিভি-৬ বাস্তবায়ন (ব্যবহার) হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোয়ালিটি অব সার্ভিস ভালো হবে। আইএসপিগুলোর খরচ কম, যার প্রভার গ্রাহকের ওপরও পড়বে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধীকে শনাক্তকরণ সহজ হবে।
তিনি মনে করেন, এই খাতের চ্যালেঞ্জ হলো ডিভাইস (ওয়াইফাই রাউটার)। ডিভাইস ডেপ্লয় করে আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের দ্রুত ৫০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। আইএসপিগুলো চাইলেই এটা পারে। তিনি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের রাউটার কেনার আগে তা আইপিভি-৬ সাপোর্ট করে কি না, তা দেখে নেওয়ার আহ্বান জানান।
জানা যায়, দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আইপিভি-৬ ব্যবহারের হার খুবই কম। আইএসপিগুলো এত দিন এই বিষয়ে উদাসীন থাকলেও সম্প্রতি তারা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়ে এই হার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে দেশের মোবাইলফোন অপারেটরগুলো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আইপিভি-৬ ব্যবহারের হার বেশি। এর ব্যবহারে মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। এরপর রয়েছে বাংলালিংক। রবির অবস্থান আরও পরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল অপারেটররা বেশ জোরেশোরে এই ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। অথচ আইএসপিগুলোর এই সুযোগ সবচেয়ে বেশি।
এপনিকের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০২০ সালের পর থেকে আইপিভি-৬-এর ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে এসে আইপিভি-৬-এর ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে (৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ) পৌঁছায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যা ৭৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, নেপাল ৩৪ দশমিক ৯১, ভুটান ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ৪৯ দশমিক ০৭ শতাংশ, মিয়ানমার ৫৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। এমনকি পাকিস্তানেও এই হার ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে দেশে আইপিভি-৬ বাস্তবায়নের হার ছিল ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই হার ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
খাত-সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, হঠাৎ করেই ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃদ্ধির হার সন্তোষজনক। এই হারে ব্যবহার বাড়তে থাকলে চলতি বছর শেষে এই হার একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।
দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ৭০ শতাংশের বেশি রাউটার আইপিভি-৬ সাপোর্ট করে না। চাইলেই এগুলো একবারে বদলে ফেলা যাবে না। সময় লাগবে। আমরা সময়ের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিটিআরসিকে (টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা) আমরা অনুরোধ করেছি, দেশে এ সময় আইপিভি-৬ সাপোর্ট করে না, এমন রাউটার আমদানির অনুমতি না দিতে। কোনও রাউটার দেশে এলে আমাদের কাছে পাঠানো হয়। আমরা দেখে বিটিআরসিকে সেগুলো পাঠাই।’
আইএসপিগুলোর এ খাতে উদ্যোগ কম কেন, জানতে চাইলে ইমদাদুল হক বলেন, ‘অনেক ধরনের সমস্যা কাটিয়ে আমরাও শুরু করেছি। আগামী এক বছরের মধ্যে এই হার অনেক বাড়বে।’
প্রসঙ্গত, আইপিভি-৬ হলো ইন্টারনেট প্রটোকলের সর্বশেষ সংস্করণ। বর্তমানে বাংলাদেশে আইপিভি-৪ ব্যবহার হচ্ছে। আইপিভি-৬-এর ব্যবহারের হার মাত্র ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আইপিভি-৪ হলো ৩২ বিটের প্রথম প্রজন্মের ইন্টারনেট প্রটোকল, যার মাধ্যমে ৪৩০ কোটি অ্যাড্রেস ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু এই অপ্রতুল ৩২ বিট দিয়ে বিশাল আইপি অ্যাড্রেসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এ কারণেই নতুন ধরনের একটি নেটওয়ার্ক লেয়ারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আইপিভি-৬ হলো ১২৮ বিটের অ্যাড্রেস লেয়ার প্রটোকল, যা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি নেটওয়ার্ক ডিভাইসকে স্বতন্ত্র পরিচয় দেয়।
(বিজ্ঞাপন) https://www.facebook.com/3square1
নিউজটি শেয়ার করুন .. ..
‘‘আমাদের বিক্রমপুর-আমাদের খবর।
আমাদের সাথেই থাকুন-বিক্রমপুর আপনার সাথেই থাকবে!’’
নিউজ ট্যাগ: